রাশিয়া থেকে ইইউয়ের এলএনজি কেনা বেড়েছে ৪০ শতাংশ

0
105
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি

ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়া থেকে পাইপলাইনে গ্যাস নেওয়া কমানোর চেষ্টা সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির আমদানি ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বাজার গবেষণা সংস্থা কেপলারের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বিশ্ববাজার থেকে রাশিয়ার অর্ধেকের বেশি এলএনজি কিনেছে ইইউ।

ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এলএনজির মূল প্রবেশদ্বার হচ্ছে স্পেন ও বেলজিয়াম। বর্তমানে চীনের পর রাশিয়ার এলএনজির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম গ্রাহক হচ্ছে এই দুটি দেশ। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

দুর্নীতিবিরোধী গোষ্ঠী গ্লোবাল উইটনেসের জ্যেষ্ঠ জীবাশ্ম জ্বালানি বিশ্লেষক জোনাথন গ্যান্ট দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, রাশিয়ার এলএনজির সিংহভাগ কিনছে ইইউভুক্ত দেশগুলো। ফলে এলএনজি হয়ে উঠেছে দেশটির রাজস্ব আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

গত বছর রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার পর ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি কমিয়ে দেয়। ফলে পাইপলাইনে রাশিয়া থেকে ইউরোপে তেল-গ্যাস সরবরাহ দৃশ্যমানভাবে কমে যায়। সেই ঘাটতি পূরণে ইউরোপীয় দেশগুলো এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকে পড়ে।

গ্লোবাল উইটনেসের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ২২ মিলিয়ন কিউবিক মিটার রুশ এলএনজি কিনেছে ইইউ দেশগুলো; ২০২১ সালের একই সময়ে যা ছিল ১৫ মিলিয়ন কিউবিক মিটার।

গ্যান্ট আরও বলেন, রাশিয়ার গ্যাস কেনা যে কথা, তেল কেনাও একই কথা। এই মুনাফা দিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধে অর্থায়ন করে রাশিয়া আর এই মুনাফা মানে আরও বেশি রক্তপাত। একদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো এই যুদ্ধের নিন্দা করছে, অন্যদিকে তারা পুতিনের পকেট ভারী করছে। দেশগুলোর উচিত, কথার সঙ্গে কাজের মিল রাখা; তা না হলে যুদ্ধ যেমন চলতে থাকবে, তেমনি জলবায়ুরও বারোটা বাজবে।

যদিও স্পেন ও বেলজিয়াম বলছে, এই পরিসংখ্যান তাদের নিজেদের তেল কেনার নয়; বরং তাদের বন্দর ব্যবহার করে ইইউর দেশগুলো এলএনজি কিনছে।

বেলজিয়ামের জিব্রুগ ও আন্তের্প বন্দর দুটি ফ্রান্স ও জার্মানিসহ ১৮টি বাজারের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। এই বন্দরের বেশির ভাগ এলএনজি রপ্তানি করা হয় প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বেলজিয়ামের মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে।

ইইউর নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০২২ সালে ইউরোপের নেতারা রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ও বিকল্প সরবরাহব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করেছেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর ইইউ রাশিয়ার তেল ও কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাশাপাশি ইইউতে রাশিয়ার কোম্পানিগুলো যেন গ্যাস সংরক্ষণ না করতে পারে তার নিষেধাজ্ঞা দেয়; সেই সঙ্গে জ্বালানি খাতে রাশিয়ার বিনিয়োগেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

ফলে গত বছর ইউরোপে জ্বালানিসংকট হয়। বিশ্ববাজারে বেড়ে যায় জ্বালানির দাম। শীতকালে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা থেকে অনেক দেশের মানুষকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করার থার্মোস্ট্যাট যন্ত্র এক ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানোর আহ্বান করা হয়; কারণ শীতকালে ইউরোপের দেশগুলোতে জ্বালানির চাহিদা থাকে বেশি। সরবরাহের ঘাটতি হলে লোডশেডিং হতে পারে, সে কারণে জ্বালানি সাশ্রয়ে মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানায় ইইউ। জ্বালানি বাঁচাতে আইফেল টাওয়ারসহ কিছু শহরে মধ্যরাতের পর রাস্তার আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জার্মানি বলে, জ্বালানির জন্য তারা আর রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়। বর্তমানে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়েসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদা মেটাচ্ছে।

স্পেনের বক্তব্য, রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রয়োজন হলো সমন্বিত ও সুসংগত পদক্ষেপ। রাশিয়া থেকে তরল গ্যাস আমদানি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেশটি বলছে, মজুতদারদের কারসাজির কারণে এটা করতে হচ্ছে।

বেলজিয়াম সরকার রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার জন্য আইনি পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করলেও তারা বুঝতে পারে, প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া থেকে আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হলে তাদের দুটি বন্দর ও ছয়টি গ্যাস সংরক্ষণ টার্মিনাল কার্যত অকেজো হয়ে যাবে। তারা ভাবছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাগুলোই রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ সীমিত করার সবচেয়ে কার্যকর পথ।

স্পেনের ইইউ প্রেসিডেন্সির একটি সূত্র বলেছে, রাশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি সীমিত করা কেবল তখনই সম্ভব, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বিষয়ে ঐকমত্যে আসবে।

সূত্রটি আরও বলেছে, ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, এ ধরনের ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে এলএনজি ক্রয়ের চুক্তি যেন নবায়ন না করা হয়। বড় ব্যবসায়ীরাও বলেছেন, তাঁরা রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেননি বা করবেন না। যদি তা-ই হয়, তাহলে আমদানি বৃদ্ধির কারণ হলো, স্পেন ও বেলজিয়ামের গ্যাস সংরক্ষণের উন্নত অবকাঠামো ও ব্যবসায়ীদের তা ব্যবহার করার ইচ্ছা।

গত মার্চ মাসে ইইউ তাদের সদস্যদেশ ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা বন্ধের আহ্বান জানায়।

ইইউর জ্বালানি কমিশনার কাদরি সিমসন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ইউরোপের উচিত হবে, তাড়াতাড়ি রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো; এটা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.