রাজশাহীতে ভোটার কেন্দ্রে আনাই চ্যালেঞ্জ

0
114
রাজশাহী সিটি করপোরেশন

রাজশাহী সিটির নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনেও ছিল না উত্তাপ। গতকাল সোমবার শেষ দিনের প্রচারণায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া অন্যদের তৎপরতা ছিল সীমিত। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়কে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা। ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য তাঁদের অনেকটা নির্ভর করতে হবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর।

যদিও এ এইচ এম খায়রুজ্জামান গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তবে বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতাদের অনেকে বলেছেন, মেয়র পদে এতটা নিরুত্তাপ ভোট এর আগে রাজশাহীতে দেখা যায়নি।

বিএনপির সিটি নির্বাচন বর্জনের মধ্যে রাজশাহীতে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু ১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটির ভোটে দলীয় প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলন রাজশাহী ও সিলেটের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়।

রাজশাহী সিটি নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সুজনের

সে অনুযায়ী রাজশাহীতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির দুই প্রার্থী শুরু থেকেই প্রচারণায় সেভাবে নামেননি। তবে ২ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে খালি মাঠেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতকাল রাত ১২টায় প্রচার শেষ হয়েছে। গতকাল দুপুরে অটোরিকশায় শহর ঘুরে প্রচারণা দেখেছেন প্রতিনিধিরা। নগরীর ১০টির বেশি ওয়ার্ড ঘুরে পোস্টার, ব্যানার ও মাইকিংয়ে নৌকা ছাড়া আর কোনো মেয়র প্রার্থীর উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

নিরুত্তাপ নির্বাচনে উত্তাপ ভিন্ন ইস্যুতে

তবে নিরুত্তাপ এই নির্বাচনে কিছুটা উত্তাপ ছড়ায় রোববার দিবাগত রাতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল হোসেনের বাড়ি থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ আটকের ঘটনায়। রোববার রাত ৯টার দিকে ইশতিয়াক আহমেদ সিটি নির্বাচনের ৯, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল হোসেনের বাসায় যান। এ সময় বাইরে থেকে মহানগর ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করেন।

আটকের সময় ছাত্রলীগের নেতারা সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা ইশতিয়াক আহমেদের মামা আবদুল হামিদ সরকার রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী। তিনি বর্তমানেও কাউন্সিলর আছেন। তাঁকে নির্বাচনে জেতানোর জন্য অর্থ লেনদেন করতে মীর ইশতিয়াক ওই বাসায় ঢুকেছিলেন।

রোববার রাত ১২টার দিকে পুলিশ ওই বাসা থেকে ইশতিয়াককে উদ্ধার করে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যায়। রাতভর তিনি থানাতেই ছিলেন। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাঁর বাবা রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইশতিয়াক আহমেদকে আটক করা হয়েছিল, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ভোটের মাঠে শুধুই নৌকা

গতকাল নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে  অন্তত ২০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁদের প্রায় সবাই বলেন, নির্বাচনে মেয়র পদ নিয়ে কোনো আলোচনাই নেই। অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চলেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান।

গতকাল দুপুরে রাজশাহী নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেন খায়রুজ্জামান। সেখানে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘এবারের নির্বাচন আপনার মতো একজন প্রার্থীর জন্য একেবারে ফাঁকা মাঠ হয়ে গেল কি না।’ এ প্রশ্নের জবাবে খায়রুজ্জামান বলেন, ‘খুশি হতাম এখানে বিএনপিসহ সব দলই যদি নির্বাচনে অংশ নিত। কিন্তু কেউ যদি না আসেন, তাহলে কিছু করার নেই। যাঁরা এসেছেন, তাঁদের নিয়েই নির্বাচন করতে হবে।’

রাজশাহী নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের সব রাস্তা, স্থাপনা, বিদ্যুতের খুঁটি, সড়কবাতির খুঁটিতে ঝুলছে নৌকার পোস্টার। এ ছাড়া সড়ক বিভাজক, বিভিন্ন গোল চত্বরেও পোস্টারের ছড়াছড়ি। বিপরীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ওরফে স্বপনের লাঙ্গল এবং জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ারের গোলাপ ফুল প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার খুঁজেও পাওয়া যায়নি।

ভোটার উপস্থিতি নিয়ে চিন্তা

 রাজশাহীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম নির্বাচনের মাঠ ছেড়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম এবং জাকের পার্টির প্রার্থী সেভাবে মাঠে নেই।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাঁদের ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও এই নির্বাচনে আসবেন। আশা করছি, ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন। হিজড়া ভোটার ৬ জন।

নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টিতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন। এর পাশাপাশি সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড মিলিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া ১৬ জন এবং জামায়াতের ৯ জন কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। এই প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে আনার চেষ্টা করবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন বলেন, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মেয়র পদে একেবারে সাদামাটা নির্বাচন হতে চলেছে। তবে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.