রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ শেষ হতেই ধর্মঘট প্রত্যাহার

0
116
রাজশাহীতে ধর্মঘট প্রত্যাহার

রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শনিবার বিকেলে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে তিনদিন চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রী ও সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে হাসপাতালে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

গত শনিবার নাটোরের এক সভায় মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় বিভাগীয় পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এরপর গত শুক্রবার দুপুরে সিএনজি ও মিশুক মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দেয়।

সরেজমিন শনিবার সকাল ১০ টা ও দুপুর ১২ টার দিকে নগরীর নওদাপাড়া ও শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলায় যাবার জন্য সাধারণ যাত্রীরা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে সবগুলো বাস সার্ভিসের টিকেট কাউন্টার বন্ধ ছিল। শিরোইল ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় আলমগীর হোসেন নামে এক গার্মেন্টসকর্মীর। তিনি জানান, তার বাড়ী নওগাঁর মান্দা উপজেলায়। তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন। অসুস্থ মাকে দেখতে গত বুধবার বাড়ি এসেছিলেন। রোববার তাকে কাজে যোগদান করতে হবে। এজন্য শনিবার ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। তবে বাস না পেয়ে তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে চড়ে নওগাঁ থেকে রাজশাহী বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। সকাল ৭টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করেও তিনি কর্মস্থলে যাবার কোন গাড়ি পাননি।

দুপুর আড়াইটার দিকে রাজশাহী রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের টিকেটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের চাপে তৈরি হয়েছে হট্টগোল। পুলিশের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।

এ সময় কথা হয় টিকেটের লাইনে দাঁড়ানো আমজাদ হোসেন নামের একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে। তিনি জানান, তার কর্মস্থল কুষ্টিয়াতে। তিনি সাধারণত বাসে যাতায়াত করেন। কিন্তু শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কুষ্টিয়ার বাসের দেখা পাননি। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রেনে যাবেন। কিন্তু দুই ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকেট হাতে পাননি তিনি।

এদিকে ধর্মঘটের কারণে মহাসড়কে গণপরিবহনের সংকট থাকলেও রাজশাহী শহরের মধ্যে তেমন প্রভাব পড়েনি। শনিবার সকাল থেকে শহরের রাস্তায় প্রচুর খালি রিকশা ও অটোরিকশা দেখা গেছে। তবে রিকশাসহ সব যানবাহনেই বেশি ভাড়া চাওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এজন্য তাদের ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে।

সরেজমিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বড় যানবাহন না থাকায় রোগীরা অটোরিকশায় আসা যাওয়া করছেন। তবে ধর্মঘটের অযুহাতে রোগীদের এক প্রকার জিম্মি করে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন রিকশা-অটোরিকশা চালকরা।

পায়ের অপারেশন শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি খুঁজছিলেন মহিদুল ইসলামের স্বজনরা। মহিদুল ইসলাম জানান, তাদের বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী এলাকায়। অন্য সময় ১৫০-২০০ টাকা হলেই অটোরিকশা পাওয়া যায়। কিন্ত অনেক গাড়ি থাকা সত্ত্বেও ধর্মঘট চলছে বলে ৪৫০-৫০০ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। তবে দরদাম করে ৪০০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করেছেন তারা।

পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, শনিবার বিকেলে বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনার আমাদের দাবি দাওয়া কিছু মেনে নিয়েছেন। যেটা উনার আওতায়াভুক্ত সেটা এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। যেটা আওতার মধ্যে নেই সেটা সরকারকে জানাতে চেয়েছেন। তাই আমরা বিকেল থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করি।

বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহ বলেন, ‘ওরা কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে এসেছিলো। সরকারকে জানিয়ে সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.