রাজনৈতিক উত্তাপে কাঁচাবাজার ফাঁকা

0
115
শনিবার শান্তিনগর বাজারের সবজির দােকান ছিল ক্রেতাশূন্য

‘ছয়টা মুরগি শেষ। দুই দিনের ব্যবসা এক দিনেই নাই হয়ে গেল। রাজনীতির কারণে আমরা ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত।’ গতকাল শনিবার বিকেলে এ প্রতিবেদককে এভাবেই বললেন রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচাবাজারের বিসমিল্লাহ ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা মাহবুব আলম। তাঁর ভাষায়, ‘মুরগির কেজি পাইকারি ১৭০ টাকা দরে কিনেছি, প্রতিটি মুরগির ওজন দুই কেজির ওপরে। ছয়টার কেনা দরই ২ হাজার ৪০ টাকার মতো। রাজনীতির বলি আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা।’

গতকাল বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে নেতাকর্মী ছত্রভঙ্গ করতে শান্তিনগর-কাকরাইল মোড়ে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এ গ্যাসের কারণে শান্তিনগর বাজারে কয়েকটি দোকানে ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে বলে জানান এখানকার ব্যবসায়ীরা।শান্তিনগর কাঁচাবাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসের ঝাঁজ থেকে নিজেদের ও ব্রয়লার মুরগি রক্ষা করতে আগুন জ্বালিয়ে ক্ষতি এড়ানো যায়নি। সরেজমিন দেখা গেছে, বাজারের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় আগুনে পোড়ানো ছাই রয়েছে।

গতকাল সরেজমিন গেছে, শান্তিনগর বাজারে মাছ, মুরগি, সবজি নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। পণ্য থাকলেও বাজার ক্রেতাশূন্য। এ বাজারের শওকত সবজি ঘরের বিক্রয়কর্মী আব্দুল আজিজ বলেন, ভোর ৫টায় সবজি এনেছেন কারওয়ান বাজার থেকে। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার সবজি তুলছেন দোকানে। অন্যদিন হলে বিক্রি শেষ পর্যায়ে থাকত। কিন্তু কোনো কাস্টমারও নেই। বিক্রি না হলে সবজিগুলো পচে যাবে। তাতে লোকসান গুনতে হবে। সমাবেশ ঘিরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে আতঙ্কে সেগুনবাগিচা এলাকার অনেক সবজি ও মুদি দোকানও বন্ধ দেখা গেছে। কারওয়ান বাজার, তেজকুনিপাড়া, হাতিরপুল, বাসাবো বৌদ্ধমন্দিরসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের বাজারেও একই অবস্থা। এসব বাজারে শাকসবজি ও মাছের সরবরাহ ছিল তুলনামূলক কম। দাম ছিল বেশ চড়া। ক্রেতাও ছিলেন হাতেগোনা।

সবজি বিক্রেতারা প্রতি কেজি বরবটি ১০০-১২০, গোল কালো বেগুন ১২০-১৪০, লম্বা বেগুন ১০০-১১০, করলা ১০০-১২০, টমেটো ১২০-১৩০, কাঁচামরিচ ১৬০-১৮০, পুরোনো আলু ৬০-৬৫ এবং নতুন আলু ১৫০-১৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। কাঁচা পেঁপের কেজি ৪০-৪৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য সবজির কেজি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাছ-মাংসের বাজারেও ক্রেতা সংকট ছিল। মাছের সরবরাহও কম দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে হতাশা

রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে গতকাল রাজধানীর পল্টন, সেগুনবাগিচা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, শান্তিনগর ও কাকরাইল এলাকায় সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উত্তেজনার কারণে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ রাখতে দোকান বন্ধ রেখেছেন তারা।

সেগুনবাগিচা এলাকায় হাবিবুর রহমান নামের এক মুদি দোকানির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ভয়ের কারণেই দোকান বন্ধ রেখেছেন। বিকেলে থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে দোকান খোলা রাখলে জিনিসপত্রের পাশাপাশি নিজেও হুমকির মুখে পড়তেন বলে জানান তিনি। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা দুলাল হোসেন বলেন, গতকাল তাঁর একেবারে বেচাকেনা হয়নি। প্রতিদিন সবজি কিনে তা ওই দিনেই বিক্রি করতে হয়। নতুবা পচে যায়। এর মধ্যে আগামীকালের হরতাল (আজ রোববার) নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে।

হরতালের কারণে বাজারে সবজি আসবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তাঁর ছোট ব্যবসা। এ ব্যবসার আয়ে সংসার চলে। কিন্তু বেচাকেনা করতে না পারলে সংসার চলবে না। একই বাজারের আলু ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, আলুর দাম বাড়তি। সরবরাহ কম। এর মধ্যে হরতালের কারণে আলু আসবে কিনা তা নিয়ে তিনিও শঙ্কায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.