যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে যে ‘রহস্যময়’ ড্রোন

0
120
রাশিয়ার সারাতভ শহরের এনগেলস বিমানঘাঁটিতে রাখা রুশ বোমারুবিমান। এই বিমানঘাঁটিতে ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালায় ইউক্রেন ফাইল ছবি: রয়টার্স
এটা খুবই শক্তিশালী একটি অস্ত্র, যা শত্রুপক্ষের ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে। এটা দিয়ে জ্বালানি কিংবা রাসায়নিক পদার্থের মজুতাগার, এমনকি বড় সেতু ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব।নিকোলায় মিত্রখিন, জার্মানির ব্রেমেন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ

বিমানঘাঁটিতে হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে মস্কো। তবে কিয়েভের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই ধারণা করছেন, হামলায় ইউক্রেন নিজেদের তৈরি ‘রহস্যময়’ ড্রোন ব্যবহার করেছে। তাঁদের মতে, ইউক্রেনের হাতে থাকা এ ড্রোন চলমান যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। তাই এটা মস্কোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রশ্ন হলো, কেন নতুন এ ড্রোনকে ‘রহস্যময়’ বলা হচ্ছে? এ বিষয়ে জার্মানির ব্রেমেন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ নিকোলায় মিত্রখিন বলেন, ‘এটা খুবই শক্তিশালী একটি অস্ত্র, যা শত্রুপক্ষের ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে। এটা দিয়ে জ্বালানি কিংবা রাসায়নিক পদার্থের মজুতাগার, এমনকি বড় সেতু ধ্বংস করা সম্ভব।’

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ড্রোন ইউক্রেন থেকে উড়ে গিয়ে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড, এমনকি রাজধানী মস্কোতেও আঘাত হানতে সক্ষম। আঘাত হানতে পারবে রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ার যেকোনো এলাকায়।

রাশিয়া তার বিরুদ্ধে যে ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে, সেটিকে সোভিয়েত আমলের ‘জেট ড্রোন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ক্রেমলিন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে এই প্রযুক্তির মাত্র একটি ড্রোন ছিল। যার কোড নাম ‘স্ট্রিজ’। ১৯৭৯ সালে এটি বানানো হয়েছিল। ড্রোনটি ১৪ মিটার লম্বা। এটির ডানা দৈর্ঘ্যে ৪ মিটারের কম। এটি ঘণ্টায় ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছয় কিলোমিটার ওপর দিয়ে উড়তে সক্ষম। এক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যে হামলা চালাতে পারে এ ড্রোন।

নিকোলায় মিত্রখিনের মতে, এর অর্থ হলো, রাশিয়ার লাখ লাখ মানুষ এখন আর নিরাপদ নন। যেকোনো মুহূর্তে তাঁদের ওপর নেমে আসতে পারে ইউক্রেনীয় ড্রোনের বিভীষিকা।

রাশিয়ার অভিযোগ, সাবেক সোভিয়েত আমলের প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এমন একটি ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেন রাশিয়ার এ অভিযোগ স্বীকার বা অস্বীকার, কোনোটাই করেনি। তবে হামলার পরপরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক টুইটে লেখেন, ‘পৃথিবী গোল’।

বিশ্লেষকদের মতে, মজার ছলে জেলেনস্কির উপদেষ্টা রাশিয়াকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘তোমাদের পূর্বসূরিদের তৈরি প্রযুক্তি আমরা তোমাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছি।’

রাশিয়া এই ড্রোনকে সোভিয়েত আমলের ‘জেট ড্রোন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে এই প্রযুক্তির মাত্র একটি ড্রোন ছিল। যার কোড নাম ‘স্ট্রিজ’। ১৯৭৯ সালে এটি বানানো হয়েছিল।

ড্রোনটি ১৪ মিটার লম্বা। এটির ডানা দৈর্ঘ্যে ৪ মিটারের কম। এটি ঘণ্টায় ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার গতিতে ভূমি থেকে ৬ কিলোমিটার ওপর দিয়ে উড়তে সক্ষম। এক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে এ ড্রোন। রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য রীতিমতো ‘রহস্যময়’ এ ড্রোন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে নতুন করে এ ড্রোন তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়, তখনই ইউক্রেন বলেছিল, এ ড্রোন তৈরির প্রযুক্তি তাদের হাতে রয়েছে এবং এটা তৈরি করা খুব একটা কঠিন কাজ না।

শুধু তা–ই নয়, ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ত অস্ত্র প্রস্তুতকারক ইউক্রোবোরোনপ্রম গত অক্টোবরে জানায়, তারা এমন একটি ভারী ড্রোন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ৭৫ কেজি বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই ড্রোন তৈরিতে স্ট্রিজ-এর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

রাশিয়ার রায়াজান অঞ্চল থেকে নির্বাসিত বিরোধী রাজনীতিক সের্গেই বিজুকিন বলেন, রাশিয়ার জন্য এটা বেশ উদ্বেগজনক। বিশেষত, যাঁদের আশপাশে বাংকার নেই, তাঁদের জন্য ভয়টা বেশি। তাই এখন হামলার ভয়ে প্রতিটি দিন পার করছেন রুশরা।

বিজুকিনের মতে, রুশ সংবাদমাধ্যম সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার যে তথ্য প্রচার করতে চায়, সংবাদমাধ্যম সেটাই প্রচার করছে। তাই বাস্তব পরিস্থিতি অনেকেই জানতে পারেন না। এ জন্য রাশিয়ার অনেকেই মনে করছেন, যুদ্ধে ইউক্রেনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিপরীতে রাশিয়ার অর্জন আকাশছোঁয়া। কিন্তু যাঁরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন, অর্থনৈতিক সংকটের জেরে প্রতিদিনই তাঁদের ফ্রিজ একটু একটু করে খালি হতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে রয়েছে হামলার ভয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.