‘মেট্রোরেলে প্রথম যাত্রা ঈদের আনন্দকে দ্বিগুণ করেছে’

0
110
মেট্রোরেল

মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে স্টেশনের ফটকের সামনে যাত্রীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছেন আনসার সদস্যরা। ফলে প্রবেশপথে যাত্রীদের ভিড় আর লম্বা লাইন তৈরি হয়। এরই ফাঁকে মা, খালা আর ভাবির সঙ্গে সেলফি তুলছিলেন সরকারি কর্মকর্তা মহছিনা আক্তার।

এগিয়ে গিয়ে কথা বলতেই জানালেন, ঈদ উপলক্ষে তাঁরা পরিবারের ১০ সদস্য দলবেঁধে মেট্রোরেলে চড়তে এসেছেন। ভিড় দেখে তাঁরা স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলে নিচ্ছিলেন। বললেন, অন্য সময় সবার ছুটি একসঙ্গে থাকে না। সবাইকে একসঙ্গে পাওয়াও যায় না। তাই ঈদের সময়টিই সবচেয়ে ভালো সুযোগ।

মেট্রোরেলে প্রথমবার যাত্রা করবেন জানিয়ে মহছিনা আক্তার আরও বলেন, ‘মা-খালাকে বলেছি, এটাই ভালো সুযোগ। সবাই মিলে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেই ঈদের আনন্দ করব। কাজের ব্যস্ততায় এমন সুযোগ সারা বছর পাওয়া যায় না। খুব ভালো লাগছে।’

আগারগাঁও স্টেশনে যাত্রীদের লম্বা লাইন

ঈদের দিন মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে অনেকেই পরিবার-স্বজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে দলে দলে স্টেশনে এসেছেন। আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। ভিড়ের চাপ সামলাতে নিচের প্রবেশফটক বন্ধ রাখতেও দেখা গেছে। কখনো আবার ফটকের কেঁচি গেট চাপিয়ে রেখে প্রবেশপথ সরু করে যাত্রীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল।

আগারগাঁও স্টেশনে ফটকের দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্য মামুন আহমেদ বলেন, স্টেশন খোলার আগে দুইটার দিকেই প্রবেশফটকের সামনের জায়গা মানুষে ভরে গিয়েছিল। গেট খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে (দ্বিতীয় তলায়) টিকিট কাউন্টারের সামনেও ভিড় জমে যায়।

 টিকিট কাউন্টারে মানুষের ভিড় সামলাতে বাইরের কেঁচি গেট কিছুটা চাপিয়ে দেওয়া হয়
টিকিট কাউন্টারে মানুষের ভিড় সামলাতে বাইরের কেঁচি গেট কিছুটা চাপিয়ে দেওয়া হয়

প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে মামুন আহমেদ বলেন, টিকিট কাউন্টারে মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশ দিয়েছেন ১০-১৫ মিনিট বন্ধ রাখতে। কিন্তু বেড়াতে আসা মানুষ তা মানছে না। তাই গেট চাপিয়ে দিয়ে কম মানুষ ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।

বেলা সোয়া তিনটার দিকে দ্বিতীয় তলায় টিকিট বিক্রির কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ ট্রেনযাত্রার টিকিটের জন্য সারিবদ্ধ দাঁড়িয়েছেন। স্বয়ংক্রিয় টিকিট ক্রয়ের কাউন্টার এবং বিক্রয়কর্মীর কাছ থেকে টিকিট কেনার কাউন্টার—দুটোতেই শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। টিকিট কেনার এমন লাইন ছাড়াও পরিবারের অন্য সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফলে স্টেশনের ভেতরে প্রচুর ভিড় ছিল।

ভ্রমণের টিকিট কিনতে পরিবারের এক সদস্যের লাইনে দাঁড়ানোর ফাঁকে অন্য সদস্যরা দলবদ্ধ হয়ে মুঠোফোনে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। কেউ কেউ আবার সন্তানের ছবি তুলছিলেন।

স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণে আসেন বারিধারার বাসিন্দা আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এবারই প্রথম মেট্রোরেলে ভ্রমণ করব। স্টেশনের ভেতরে এসেই খুব ভালো লাগছে। আশা করছি ট্রেনে ওঠার পর আরও ভালো লাগবে।’ উত্তরা পর্যন্ত ভ্রমণের টিকিটের জন্য তিনি প্রায় ১৫ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়েছেন বলেও জানান।

ঈদের দিন মেট্রোরেলে ভ্রমণকে মোবাইলবন্দী করা হচ্ছে
ঈদের দিন মেট্রোরেলে ভ্রমণকে মোবাইলবন্দী করা হচ্ছে

পুরান ঢাকা থেকে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণে আসেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘চালুর পর থেকেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণের ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মার্কেট যেদিন (মঙ্গলবার) বন্ধ থাকে, সেদিন মেট্রোরেলের সাপ্তাহিক বন্ধ। তাই ভ্রমণের সুযোগ হচ্ছিল না। তাই ঈদের দিনটিকেই ভ্রমণের জন্য বেছে নিয়েছি।’

অনেকটা আক্ষেপ করে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সংস্কারকাজের নামে শাহবাগের শিশুপার্ক কয়েক বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ ঈদের সময় মানুষ সন্তানদের নিয়ে সেখানে বেড়াতে যেত। মেট্রোরেল ভ্রমণের পর সুযোগ থাকলে সেখানে যেতাম। এখন উত্তরার দিয়াবাড়িতেই সময় কাটিয়ে আসব।’

মেট্রোরেলে করে আগারগাঁও থেকে উত্তরার দিকেই নয়, উত্তরার দিক থেকেও প্রচুর মানুষকে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করে আগারগাঁও অংশে আসতে দেখা গেছে। উত্তরা থেকে আসা যাত্রীরা আগারগাঁও স্টেশনে নেমে পাশের বিমানবাহিনী জাদুঘরে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। কাউকে আবার ফিরতি টিকিট কেটে উত্তরায় ফিরে যেতে দেখা গেছে।

উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর থেকে আগারগাঁও আসেন চার বন্ধু রাফসান, আকিব, জারিফ ও সুমিত। চারজনই উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এঁদের মধ্যে রাফসান বলেন, ‘ঈদের দিন বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করেছি মেট্রোরেল ভ্রমণের। প্রথমবার ট্রেন ভ্রমণ করে খুব ভালো লাগছে।’ বিমানবাহিনী জাদুঘর ও চন্দ্রিমা উদ্যান ঘুরে পরে উত্তরায় আবার ফিরবেন বলে জানান।

কার্ড ছুঁয়ে দিলে খুলে যায় প্ল্যাটফর্মে ঢোকার ফটক। সেখানে এক শিশুকে সহায়তা করছেন রোভার স্কাউটের একজন সদস্য
কার্ড ছুঁয়ে দিলে খুলে যায় প্ল্যাটফর্মে ঢোকার ফটক। সেখানে এক শিশুকে সহায়তা করছেন রোভার স্কাউটের একজন সদস্য

এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোস্টেশনে গিয়ে সেখানেও ভিড় দেখা গেছে। কেউ মিরপুর থেকে উত্তরা যাচ্ছিলেন। অনেকে আবার উত্তরা থেকে মিরপুর আসছিলেন। উত্তরা থেকে আসা মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশনে নামা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের কেউ চিড়িয়াখানায়, কেউ আবার বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেড়াতে যাবেন।

উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশনে নামেন রাজিউল ইসলাম। সঙ্গে পরিবারের আরও পাঁচ সদস্য ছিলেন।

রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রা ঈদের আনন্দকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে। আমার পরিবারের সবাই অনেক খুশি। আমার ছেলে ও মেয়ে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে। এখন সন্তানদের চিড়িয়াখানায় ঘুরে দেখিয়ে বাসায় ফিরে যাব।’

মেট্রোরেলে ওঠার জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা
মেট্রোরেলে ওঠার জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ঈদের দিন মেট্রোরেল ছাড়া হয় বেলা দুইটায়। চলে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। আগামীকাল (রোববার) থেকে আবার আগের মতোই সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু থাকবে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে এক অফিস আদেশে বলা হয়, ২০ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত পবিত্র ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি উপলক্ষে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও—এই ৯টি স্টেশনে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ২০ মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলবে। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলবে না।

ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.