মৃত্যর সঙ্গে লড়াই করা মেয়েটি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে মিষ্টি নিয়ে গেলেন আইসিইউতে

0
118
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামালের সঙ্গে ফারিহা আফরিন

যোগাযোগ করা হলে ফারিহা আফরিন শোনালেন তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে গল্প। বললেন, ‘আমার অতীতের অসুস্থতা ছিল আরও ভয়াবহ। আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন আমার “জিবিএস” হয়েছিল। এটা একরকম ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত হয়। আমি তখন বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। প্রথম আমার একটি হাত প্যারালাইজড হয়ে যায়। লিখতে পারছিলাম না। তারপরও আমি স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাই। ওই দিন আমি বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম। তখন আমার পা প্যারালাইজড হয়ে গেল। তবু আমি পরীক্ষা দিতে চাই। শেষ পর্যন্ত আমার স্কুলের শিক্ষকেরা সপ্তম শ্রেণির একটি মেয়েকে শ্রুতলেখক হিসেবে নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেন।’

ফারিহা বলতে থাকেন, ‘আমি উত্তর বলি আর ওই মেয়ে লিখল। এরপর আমার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। আমি আর কথা বলতে পারি না। পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষাটা আর দেওয়া হলো না। প্রথম অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার নম্বর গড় করে আমাকে পাস করিয়ে দেওয়া হলো। আর আমাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলো। সারা দিন আমি ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে পড়ে থাকলাম। কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। এরপর আমাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হলো। ওই চিকিৎসক আমাকে আইসিউতে ভর্তির সুপারিশ করলেন। কিন্তু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিউর শয্যা ফাঁকা না থাকায় আমাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালের আইসিউতে নেওয়া হলো। আমি তখন মৃত মানুষের মতো হয়ে গিয়েছিলাম, চোখের পাতা পর্যন্ত নাড়াতে পারতাম না। এক দিন পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে শয্যা পাওয়া গেল। আমি সেখানে টানা এক মাস চিকিৎসাধীন ছিলাম। পুরো সময় আমাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হলো।’

ফারিহা আফরিন আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের প্রথম দিন, অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে আমাকে বাসায় আনা হলো। তারপর প্রায় দুই মাস আমাকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হলো। আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি। ২০২০ সালে পিএন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২২ সালে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিই। এবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। সংবাদটি শোনার পরেই আমার মনে হয়েছে, আমি আইসিইউতে এক মাস মৃত মানুষের মতো ছিলাম। আমার বাবা এক মাস হাসপাতালের বারান্দায় কাটিয়েছেন। অনেক রাতে বাবার কাছে খবর গেছে যে আমি মারা গেছি। সে অবস্থা থেকে আমি আজ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। আইসিইউর ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামালের অবদানের কথা কোনো দিন ভুলতে পারব না। সে জন্যই মাকে সঙ্গে করে এসেছিলাম।’

ফারিহা আফরিনরা দুই ভাই-বোন। বড় ভাই রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ে পড়েন। মা লায়লা আঞ্জুমান একটি কলেজের প্রদর্শক। বাবা মো. আনোয়ার হোসেন কৃষিভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক। তিনি  বলেন, ‘টানা এক মাস হাসপাতালের বারান্দায় কাটিয়েছি। রাতে রাতে খবর এসেছে মেয়ে মারা গেছে। আমার সেই মেয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আমি আইসিইউর ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফার কথা কোনো দিন ভুলব না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.