মুন্সিগঞ্জের আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না

0
100
হিমাগারে আলু বাছাই করছেন শ্রমিকেরা। গতকাল মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর গরিবে নেওয়াজ কোল্ডস্টোরেজে

প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না মুন্সিগঞ্জের আলুর বাজার। হিমাগার ও খুচরা বাজারে আবারও আলুর দাম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়েছে। হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি ৪০-৪১ ও খুচরা বাজারে ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার হিমাগার ও কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অথচ সরকারি নির্দেশনা, হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭ ও খুচরা বাজারে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে হবে।

সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে সবজি ব্যবসায়ীরা বলেন, আড়তে আলুর দাম মাঝখানে কিছুটা কম ছিল। তখন ৩৩-৩৪ টাকায় কেনা যেত। কয়েক দিন ধরে হিমাগার থেকে আলু কিনতে হচ্ছে ৪০-৪১ টাকায়। বাজার পর্যন্ত আলু পৌঁছাতে ৪২-৪৩ টাকা দাম পড়ছে। সে জন্য খুচরায় দাম পড়ছে মানভেদে ৪৮-৫০ টাকা।

মুন্সিগঞ্জ বড় বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মিছির আলী বলেন, হিমাগার থেকে ২৭ টাকা কেজি আলু বিক্রির কথা থাকলেও মজুতদারেরা সেটি মানছেন না। কয়েক দিন ধরে আরও বেপরোয়া হয়ে গেছেন তাঁরা। ইচ্ছেমতো দামেই আলু বিক্রি করা হচ্ছে। হিমাগারেই আলুর দাম ৪০ টাকার ওপরে। এর সঙ্গে খরচ ছিল আরও এক থেকে দেড় টাকা। তাই পাইকারি বাজারে ৪৪-৪৬ টাকা কেজি আলু বিক্রি হয়েছে। এই দামে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন।

সরকার হিমাগার পর্যায়ে ২৬–২৭ টাকা এবং খুচরায় ৩৫–৩৬ টাকা নির্ধারণ করেছিল, তা কোথাও মানা হচ্ছে না।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর সুবচনী বাজার থেকে ৫০ টাকা করে ২ কেজি আলু কিনেন আনিসুর রহমান নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, সরকার ঘোষণা দিল খুচরা বাজারে আলুর দাম ৩৬ টাকা থাকবে। ঘোষণার পরও বাজারে ৪০ টাকা দাম ছিল। কয়েক দিন ধরে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসন অভিযান করেও আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারল না।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার গরীবে নেওয়াজ কোল্ডস্টোরেজে গিয়ে দেখা যায়, হিমাগার থেকে আলু বের করে বাছাই শেষে শ্রমিকেরা বস্তায় ভরে মাপছেন। এসব আলুর মূল্য নির্ধারণ ছাড়াই চট্টগ্রাম ও বরিশালের ভোলার আড়তে পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এ হিমাগারের ব্যবসায়ী কাইয়ুম ব্যাপারী বলেন, ‘সরকার আলুর দাম বেঁধে দেওয়ার পর বড় বড় মজুতদার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ঘাপটি মেরেছিলেন। বাজারে সব তরকারির দাম আকাশছোঁয়া, আলুর চাহিদা বেশি। তাই মজুতদারেরাও বেশি দামে আলু বিক্রি করছেন। আমাদের দলিল কেনা ৪০ টাকার ওপরে। তাই আমরাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি।’

গরীবে নেওয়াজ কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক ফজলুল হক জানালেন, হিমাগার থেকে প্রতিদিন আলু বের হচ্ছে। তবে কেউ দাম নির্ধারণ করছেন না। ব্যবসায়ীরা তাঁদের আলু ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে পাঠাচ্ছেন। সেখানেই আলুর দাম নির্ধারিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে হিমাগার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কিছু করার থাকছে না।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫–৩৬ টাকা এবং হিমাগার পর্যায়ে ২৬–২৭ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে ব্যবসায়ীরা এই দর না মেনে হিমাগার পর্যায়ে ৩৯-৪০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৫-৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জের হিমাগার পরিদর্শনে আসেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। হিমাগার পরিদর্শন শেষে তিনি পরদিন থেকে রসিদের মাধ্যমে ২৬-২৭ টাকা কেজি দরে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে ৩৫-৩৬ টাকা দরে আলু বিক্রির নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেন মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে।

শুরুতে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেছে। বিভিন্ন হিমাগারে অভিযানও চালিয়েছে তারা। ধীরে ধীরে তা কমে গেছে। কিন্তু গতকাল টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হিমাগারগুলোয় এবং মুন্সিগঞ্জ-টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাজারগুলোয় প্রশাসনের নজরদারি চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম এবং মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাফর রিপনের মুঠোফোনে কল করা হলে তাঁরা ধরেননি।

তবে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘হিমাগারগুলোয় আমাদের নিয়মিত তদারকি ছিল। সরকার নির্ধারিত দামে আলু নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন সুপারশপেও সরবরাহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করে তাঁরা কেন দাম বাড়াল, রসিদের মাধ্যমে কেন হিমাগারগুলোয় আলু বিক্রি করা হচ্ছে না—বিষয়গুলো নিয়ে ব্যবসায়ী ও হিমাগার কর্তৃপক্ষকে ডাকা হবে। যাঁরা নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.