মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রক্রিয়াধীন সব আইন স্থগিতের দাবি সম্পাদক পরিষদের

0
119
‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উপলক্ষে বক্তব্য রাখছেন হাসানুল হক ইনু

দেশে স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রক্রিয়াধীন সব আইন স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংবাদপত্র সম্পাদকদের এই সংগঠন।

‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়। সম্পাদক পরিষদের পক্ষে দাবি তুলে ধরেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। এখনই বাতিল করা সম্ভব না হলে অন্তত আইনটি সংশোধন করে তাতে নতুন ধারা যুক্ত করতে হবে যে, এই আইনটি গণমাধ্যম ও মুক্ত মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, শুধু সাইবার অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা হবে।

একইসঙ্গে মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রক্রিয়াধীন অন্যসব আইন তৈরির প্রক্রিয়া এখনই স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।

‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সকল প্রকার মানবাধিকারের চালিকা শক্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক ও দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন।

আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

হাসানুল হক ইনু বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চমৎকার পাহারাদার। গণতন্ত্রকে মাপার মাপকাঠি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। নিরপেক্ষতার চেয়েও গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা বেশি জরুরি।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। যতক্ষণ না এটি বন্ধ করতে পারছেন, সংশোধন না করতে পারছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মামলা দায়ের করবেন। অভিযোগ এলেই গ্রেপ্তার করে চালান দিয়ে কারাগারে পাঠাতে পারবেন না। জামিন পাওয়ার অধিকার থাকতে হবে। সবাই বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা দরকার। অবশ্যই পর্যালোচনা এবং সংশোধন করা দরকার। এটি ঝুলিয়ে রাখা ঠিক না।

তিনি আরও বলেন, সরকারকে বলব অবিলম্বে আইনমন্ত্রীর কথা বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ সাপেক্ষে কোথায় কোথায় সংশোধন করতে হবে, সেগুলো সংশোধন করে দিন। সাইবার জগতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কী ধরনের আদালত ও আইনকানুন দরকার তাও ঠিক করে বলে দিন। সাইবার জগতের নিরাপত্তার বিধান করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার করে এটিকে গণমাধ্যমবান্ধব করেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোনো দর-কষাকষি চলতে পারে না। আবার ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তা বিধানের জন্যও কোনো রকমের দর-কষাকষি চলতে পারে না। দুটোই থাকতে হবে। ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তার বিধানও করতে হবে, গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বাকস্বাধীনতাও নিরাপদ করতে হবে। এই দুটো নিশ্চিত করার মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যতে সাইবার জগতে ভূমিকা রাখতে হবে। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমকেও সাইবার জগতের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়। এখন পরিবেশটা এমন দাঁড়িয়েছে, কিছু বলতেও ভয় লাগে।

সম্পাদক পরিষদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যেসব আইন প্রক্রিয়াধীন আছে, সেই প্রক্রিয়া এখনই স্থগিত করা। আইনগুলোর মধ্যে যেসব ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ব্যাহত করতে পারে সেগুলো আইন থেকে বাদ দেওয়া।

২. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। আর যদি তা বাতিলে সরকারের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে এমন একটি ধারা যুক্ত করতে হবে, যেখানে বলা থাকবে, এই আইন গণমাধ্যম, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রযোজ্য নয়। সাংবাদিকতার কারণে আজ পর্যন্ত যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে হবে।

৩. যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেটি সরকার উদ্যোগী হয়ে যেন একেবারেই মুছে ফেলে।

৪. সাংবাদিকতার সুরক্ষার জন্য আইন হতে পারে, যা সংবিধানের চেতনার মধ্যে রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.