মিয়ানমারের ১৫ গ্রাম ঘুরে দেখবে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল

0
66
রাখাইন পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে আজ শুক্রবার সকালে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উদ্দেশে রওনা করে

টেকনাফ থেকে রওনা দেওয়া ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলটি আজ শুক্রবার দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অন্তত ১৫টি গ্রাম ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। বেলা তিনটা পর্যন্ত তিন দফায় মংডু শহরের উত্তর-পূর্ব দিকের গ্রামগুলোতে নেওয়া হবে রোহিঙ্গাদের, যেখানে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবির থেকে ফিরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে। গ্রামগুলো পরিদর্শনের মধ্যে বেলা দেড়টার দিকে মংডু ট্রানজিট ক্যাম্পে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইমিগ্রেশন দলের মধ্যে প্রত্যাবাসনবিষয়ক সংক্ষিপ্ত আলোচনাও হওয়ার কথা আছে।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে টেকনাফের চৌধুরীপাড়া জেটি থেকে রওনা দেওয়া ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলটি নাফ নদী অতিক্রম করে রাখাইন রাজ্যের নাকফুরা খালের জেটিতে পৌঁছেছে ৪৫ মিনিট পর। সকাল সোয়া ১০টার দিকে নাফফুরা ঘাটে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্যদের স্বাগত জানান সেখানকার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা।

২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সহযোগিতায় আছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারি একাধিক সংস্থার আরও সাত সদস্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নাকফুরা ঘাটে পৌঁছার পর বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের গাড়িতে তুলে পাশের গ্রাম বলিবাজারে নেওয়া হয়। বলিবাজারের বিপরীতে (পশ্চিম দিকে) বাংলাদেশের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা এলাকা। জাদিমুরা থেকে খালি চোখে নাকফুরা এলাকা দেখা যায়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্যদের নাকফুরা, বলিবাজার, থায়াংখালী, ঝিমংখালী গ্রাম ঘুরিয়ে সড়কপথে নেওয়া হবে মংডু শহরে। বেলা দেড়টার দিকে মংডু ট্রানজিট ক্যাম্পে দুপুরের খাওয়া শেষে দুই দেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন ও যাচাই করা প্রত্যাবর্তনকারীর ব্যবস্থা–সম্পর্কিত বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হবে। এরপর মংডুর পাশের গ্রাম কাহারীপাড়া, নুরুল্যাপাড়া, সিকদারপাড়াসহ আরও কয়েকটি গ্রাম দেখানো হবে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মংডুতে নির্মিত ট্রানজিট কেন্দ্রসহ নানা অবকাঠামো পরিদর্শনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মংডু ট্রানজিট ঘাট থেকে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্যদের দ্রুতগতির জলযানে চড়ে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য বলেন, রাখাইনে ১৫টি গ্রাম পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলকে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক কী পরিমাণ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, তা দেখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

রাখাইন পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের পথে

পুলিশ ও আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৫ মার্চ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে মিয়ানমারের ২২ সদস্যের প্রতিনিধিদল টেকনাফ এসে ১৭৭টি পরিবারের ৪৮০ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই করেছিল। ওই তালিকা থেকেই ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে।

২০ জনের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের মধ্যে টেকনাফের লেদা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২৪) ২ জন, শালবাগান আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২৬) ১৪ জন এবং জাদিমুরা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২৭) ৪ জন আছেন। তাঁদের মধ্যে নারী তিনজন।

আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, চীনের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে যে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্য থেকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সম্মতি পাওয়া গিয়েছিল। অবশিষ্ট ৪২৯ জন রোহিঙ্গার বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল। বাংলাদেশ সরকারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল গত মার্চ মাসে টেকনাফে এসে ৪২৯ জন রোহিঙ্গার পাশাপাশি তাঁদের পরিবারে জন্ম নেওয়া আরও ৫১টি শিশুর তথ্য সংগ্রহ করে। এখন রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনে তাদের (রোহিঙ্গা) প্রতিনিধিদল রাখাইনের পরিস্থিতি দেখার সুযোগ পাচ্ছে।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে, রাখাইন রাজ্য থেকে। রোহিঙ্গা–ঢলের ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। আগে দুবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে তা ভন্ডুল হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.