মা বলতেন, প্রয়োজনে মিডিয়া ছেড়ে দিতে হবে…

0
108
তমা মির্জা, শিল্পীর সৌজন্যে

বাবা প্রকৌশলী। মেয়েও প্রকৌশলী হবেন, এমন আশা ছিল মা–বাবার। কিন্তু স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েই বিনোদনজগতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মেয়ে তমা মির্জা। তাই বিনোদনজগতের কাজে সময় দিতে পড়ালেখার চাপ কমাতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হলেন। এরপর পাস করে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ বেছে নিলেন। গত রোববার ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে স্নাতক স্বীকৃতি পেলেন ঢাকাই ছবির এই নায়িকা। মা, বাবা ও ভাইকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গাউন গায়ে টুপি উড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো তমার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোর কাছে তমা বলেন, ‘অনেক দিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভোকেশন হয় না। এ কারণে মনটা খারাপ ছিল। মনে মনে ভাবতাম, এত কষ্ট করে স্নাতক পাস করলাম, কনভোকেশনের গাউন আর টুপি পরা হয়তো আর হবে না। শেষ পর্যন্ত হয়েছে। খুবই ভালো লাগছে। সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে কী যে আনন্দ করেছি! যাওয়ার আগে থেকেই সুপার এক্সাসাইটেড ছিলাম আমি। টুপি উড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সারা দিন ছবি তুলেছি। প্রায় বারো শ ছাত্রছাত্রী ছিল অনুষ্ঠানে। দারুণ কেটেছে দিনটি। আমার মা ও বাবা বেশি খুশি হয়েছেন। আমার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার চেয়ে স্নাতক সনদ আব্বা–আম্মাকে বেশি আনন্দ দিয়েছে।’

তমা মির্জা, শিল্পীর সৌজন্যে

তমা জানালেন, ভালো নম্বর পেয়েই আইন বিষয়ে স্নাতক পাস করেছেন তিনি। তবে তাঁর জন্য এটি সহজ ছিল না। যখন বাসা থেকে বেরিয়ে ক্লাসের উদ্দেশে রওনা হতেন। দূরের ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে যে সময় লাগত, মনে মনে ভাবতেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাবেন, আর পড়বেন না।

বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে তমা
বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে তমা, সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘আশুলিয়ায় আমাদের ক্যাম্পাস। সকাল নয়টার ক্লাস ধরতে আমাকে ভোর পাঁচটায় বেরোতে হতো। রাস্তাঘাট খারাপ, জ্যামের কারণে ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে প্রায় তিন, সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগত। মাঝেমধ্যে ধৈর্য হারিয়ে ফেলতাম। একবার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম, আর পড়ব না। কিন্তু মা–বাবার কড়া শাসনে সেটা সম্ভব হয়নি। মা–বাবার কথা ছিল, “তোমার বংশে সবাই গ্র্যাজুয়েশন পাস। তোমাকেও সেটা করতে হবে। প্রয়োজনে মিডিয়া (বিনোদনজগৎ) ছেড়ে দিতে হবে।” বিনোদনজগতের ব্যস্ততা, ক্যাম্পাসে আসা–যাওয়ার কষ্ট, সব পেরিয়ে শত কষ্টের মধ্যেও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সনদ হাতে পেয়েছি। এ ভালো লাগা অন্য রকমের।’

এদিকে একদিকে ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার সফলতায় আনন্দে উড়ছেন তমা মির্জা, অন্যদিকে স্নাতক সনদ পাওয়ার আনন্দ। সব মিলিয়ে এটি ভাগ্যের বছর বললেন তমা, ‘আমি মনে করি, এটি আমার জন্য সৌভাগ্যের বছর।

তমা মির্জা
তমা মির্জা

“সুড়ঙ্গ” আমাকে যে পরিচিতি দিয়েছে, মিডিয়ার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সেটি পাইনি আমি। আবার এ বছরই স্নাতক সনদ পেলাম। দুটি বিষয়ই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুটি বিষয়ের সফলতা আমাকে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে। আমি যখন গতকাল (রোববার) ক্যাম্পাসে গেলাম, সেখানেও “সুড়ঙ্গ”-এর সফলতা টের পেলাম। সবাই আমাকে উইশ করছিলেন, ছবি তুলছিলেন আমার সঙ্গে।’

আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করার ইচ্ছা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এখন তো মিডিয়ার কাজের ব্যস্ততা বেশি। তাই সময় বের করে স্নাতকোত্তর করার ইচ্ছা। কারণ, এই আইনবিষয়ক পেশাটা আমি উপভোগ করি। স্নাতকোত্তর শেষ করে নিয়মিত অনুশীলনের ইচ্ছা আছে। মনে মনে ভাবি, এই বিষয়ে পড়ে এবার আইনজীবী হিসেবে আদালতে দাঁড়াব, অন্য রকমের একটা অনুভূতি কাজ করবে।’

‘সুড়ঙ্গ’ ছবিতে তমা মির্জা ও আফরান নিশো
‘সুড়ঙ্গ’ ছবিতে তমা মির্জা ও আফরান নিশো,ছবি : চরকির সৌজন্যে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.