‘মা জামিনের কী করলা’, জবাব নেই খাদিজার মায়ের

0
115
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা। ফাইল ছবি

চারিদিকে ঈদের আনন্দ বয়ে গেলেও তার ছিটেফোঁটাও নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরার মায়ের মনে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১০ মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন খাদিজা। শুক্রবার ঈদের পরদিন মেয়েকে দেখতে কারাগারে গিয়েছিলেন মা ফাতেমা খাতুন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে খাদিজার মা বলেন, ‘এই যে ঈদ গেল। কুরবানি দিইছি, কিন্তু খাইতে পারি না মেয়ে ছাড়া। গলা দিয়ে নামে না। দুইডা ঈদ গেল আমার মেয়ে ছাড়া। এইটারে কি ঈদ বলে! এর মতো কষ্ট আর কি আছে? সন্তান জীবিত আছে কিন্তু আমার পাশে নাই। কোরবানির মাংস পৌঁছাতে পারলেও নিজ হাতে খাওয়াতে পারলাম না।’

খাদিজার মা বলেন, ‘প্রতি ঈদে সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার মেয়ে সালামি চাইতো। আমি বকা দিতাম। কিন্তু এখন আমারে আর মা বলেই ডাকতে পারে না। এই মেয়েকে নিয়েই আমার আশা ভরসা। দশ মাস কারাগারে খাদিজা। একটা অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থী, ভার্সিটিতে পড়ছে। সে কতই বা জানবে। ভুল করে কিছু কথা বলেছে তাই বলে দশ মাস জেলে থাকবে? মানুষ চুরি করে, ডাকাতি করে, খুন করে, আরও কত জঘন্য কাজ করে জামিন পায়, কিন্তু আমার মেয়েটার জামিন হচ্ছে না। একের পর এক শুনানি পেছাচ্ছে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে খাদিজার মা বলেন, ‘আমরা তো রাজনীতি করি না। ওর বাপ বিদেশে কাজ করে, সেই টাকা দিয়ে চলি। আমরা কেমন তা চারপাশে শুনলেই জানতে পারবেন। আমার মেয়ে আমারে আজ (শুক্রবার) জিগায়, মা জামিনের ব্যাপারে কী করলা? আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি। আমি ওর এই প্রশ্নের কাছে অসহায়। দশ মাস মেয়ে ছাড়া আমি। আমি এক অসহায় মা।’

খাদিজার বোন সিরাজাউম মনিরা বলেন, ‘আমার বোন নিরাপরাধ। আমার বোনের মুক্তি চাই। এভাবে একজন মেধাবী জেলে শেষ হতে পারে না। দশ মাস পার হয়ে গেছে।’

খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২২ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খাইরুল ইসলাম এবং অন্যটির বাদী কলাবাগান থানার এসআই আরিফ হোসেন। দুই বাদীই দায়িত্ব পালনকালে মুঠোফোনে ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে খাদিজাতুল কুবরা ও মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেনের ভিডিও দেখতে পান। তারপর দুজনই নিজ নিজ থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন। খাদিজার জাতীয় পরিচয়পত্র ও একাডেমিক কাগজপত্রে বয়স ১৭ বছর কিন্তু তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে ২০২০ সালের ১১ ও ১৯ অক্টোবর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পুলিশ দুটি মামলা করে। এর দুই বছর পর মামলার অভিযোগপত্র তৈরি হলে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে কারাগারে খাদিজা।

বিচারিক আদালতে দুবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই জামিন আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি। এখন আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.