মার্টিনেজের সঙ্গে দেখা হলে টিপস চাইতাম

0
90
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ শেষে সোমবার ঢাকায় পৌঁছেছেন জিকোরা বাফুফে

বেঙ্গালুরুতে রোববার রাতে ঘুমাতে পারেননি। সোমবার সকালেই দেশের বিমান ধরার তাড়া। দুপুর সোয়া ১টার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে আনিসুর রহমান জিকোর চোখ ছিল বহির্গমনের দিকে। সেদিক দিয়ে ঢাকা ছাড়েন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কিন্তু মার্টিনেজকে স্বচক্ষে দেখা হয়নি জিকোর। যাঁর ভিডিও দেখে শিখছেন, সেই মার্টিনেজকে দেখতে না পারার আক্ষেপ এবং সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পারফরম্যান্স নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। তা শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

 বেঙ্গালুরু থেকে আপনারা যখন ঢাকায় এসেছেন, বিমানবন্দরে তখন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। দেখা হয়েছে কি তাঁর সঙ্গে? 

জিকো : না দেখা হয়নি। দেখা হলে অবশ্যই ভালো হতো। কারণ সে বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর গোলরক্ষক, বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক। তাঁর সঙ্গে দেখা হলে কিছু টিপস নিতে পারতাম।

 দেখা না হওয়ায় আফসোস হচ্ছে? 

জিকো : বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার বাংলাদেশে এসেছেন, তাঁকে দেখতে পারিনি। মন তো খারাপ হওয়ারই কথা। অবশ্য আমরা দেশের বাইরে ছিলাম, দেশে থাকলে দেখা করাটা একটু সহজ ছিল। দেখা করলে বেশি ভালো হতো। এখন তো আর করার কিছু নেই।

গোলরক্ষকদের মধ্যে আপনার আইডল কে? 

জিকো : আমি বিভিন্নজনের ভিডিও দেখি। এখন মার্টিনেজ, অ্যালিসন বেকার– সবাইকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। তাদের ভিডিওগুলো দেখে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করি। কিছুদিন আগেও অ্যালিসন বেকারকে অনুসরণ করতাম। তাঁকে খুব ভালো লাগত। তবে এখন আমি মার্টিনেজকে অনুসরণ করি। তাঁর ভিডিওগুলো প্রতিনিয়ত দেখি।

 দলে থাকলেও সোহেল এবং রানার পরই ছিল আপনার অবস্থান। এখন তো যে কোনো কোচের প্রথম পছন্দ আপনি। 

জিকো : আমি জাতীয় দলে ঢোকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। দীর্ঘদিন জাতীয় দলে থাকলেও খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। রানা ও সোহেল ভাই অনেক ভালো করছিলেন বলে আমার খেলার সুযোগ হচ্ছিল না। হঠাৎ করে কাতারের সঙ্গে ম্যাচে তখনকার কোচ জেমি ডে আমাকে নিয়ে ঝুঁকি নেন। সেখান থেকে মানুষের প্রত্যাশা ও কোচদের আস্থার প্রতিদান দেওয়ার জন্য প্রতিটি ম্যাচেই ভালো করার চেষ্টা করি। জানি একটু খারাপ করলেই আমাকে বকা দিবে, আবার ভালো করলে সবাই প্রশংসা করবে। প্রত্যাশার জায়গায় সবাই যখন আমার কাছ থেকে বেশি চায়, তখন আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং দেশের জন্য ভালো করতে হবে– মাথায় সব সময় এগুলো কাজ করে।

দুই বছর আগের সাফেও ছিলেন। একজন গোলরক্ষক হিসেবে আগের আর এবারের সাফের মধ্যে তফাতটা কী? 

জিকো : অন্যান্য সাফের চেয়ে আমার কাছে এবারের আসরটি স্পেশাল। কারণ এবার দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের দুটি শক্তিশালী দেশ কুয়েত ও লেবানন ছিল। আমি মনে করি, এই আসরটি সবচেয়ে বেশি কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমরা যারা প্লেয়ার, তারা শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

গত কয়েক আসরের পারফরম্যান্সের কারণে এবার বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যাশাও ছিল কম। কিন্তু দল তো সেমিফাইনালে উঠেছে। 

জিকো : আপনি হয়তো জানেন বাংলাদেশ দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই কিন্তু বসুন্ধরা কিংসের। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দল ঘোষণার পরই আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি এ টুর্নামেন্ট নিয়ে। সাফের জন্য একটা পরিকল্পনাও সাজাই। আমাদের মূল টার্গেটই ছিল সাফ। কোচ যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা মাঠে সেভাবে খেলার চেষ্টা করেছি। আপনি দেখেন আমরা লেবাননের কাছে হারছি ঠিকই কিন্তু লড়াই করেছি। মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে আমরা সুন্দর ফুটবল খেলেছি। সর্বশেষ কুয়েতের সঙ্গে সেমিফাইনালে‌ ১০৭ মিনিটের সময় গোল হজম করেছি। যদি গোলটা হজম না করতাম, তাহলে আমরাও ফাইনাল খেলতাম।

 সেমিফাইনালে বিরতির পর মনে হয়েছে ম্যাচটা জিকো বনাম কুয়েতের সঙ্গে। 

জিকো : বড় টিমের সঙ্গে যখন খেলি, তখন ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের অনেক পরীক্ষা দিতে হয়। ওই জায়গা থেকে শতভাগ দিতে হয়, মনোযোগ ধরে রাখার সঙ্গে অনেক সাহস লাগে। আত্মবিশ্বাস ও মেন্টালিটি অনেক কিছু ধরে রাখতে হয়। আমি আমার জায়গা থেকে শক্ত ছিলাম, এজন্য হয়তো সফল হয়েছিলাম।

 গোল হজম করার আগ পর্যন্ত কি মনে হয়েছে, ম্যাচটা টাইব্রেকারে যাবে? 

জিকো : হ্যাঁ, আমার বিশ্বাস ছিল যে ম্যাচ টাইব্রেকারে গেলে আমরা জিততে পারব। আবার এমনও মনে হয়েছে শেষের দিকে আমরা গোল করতে পারব। এ চিন্তাভাবনা কাজ করছিল। আর খেলা চলাকালে আমি মানসিকভাবে টাইব্রেকারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কীভাবে বল ফেরাব; এসব চিন্তাও করছিলাম। কারণ ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় বসুন্ধরা কিংসের হয়ে অনেক ম্যাচেই আমি টাইব্রেকারে দলকে জিতিয়েছিলাম। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে কুয়েতের বিপক্ষেও খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু গোল হজম করার পর মনটা ভেঙে যায়। তারপরও আমাদের খেলোয়াড়রা শেষ পর্যন্ত গোল পরিশোধের অনেক চেষ্টা করেছে। ভাগ্য সহায় ছিল না, তাই হয়তো জিততে পারিনি।

 অনেকেরই ধারণা, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আপনি অন্যতম সেরা গোলরক্ষক। অনেকেই আমিনুল-বিপ্লবের সঙ্গে আপনার তুলনা করছেন। 

জিকো : অবশ্যই আমি বিদেশি লিগে খেলতে চাই। আবার অন্য দিক চিন্তা করলে আমি মনে করি বসুন্ধরা কিংস কিন্তু এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা একটি ক্লাব। বাইরে যদি প্রস্তাব পাই, তাহলে অবশ্যই চিন্তাভাবনা করব। আর আমিনুল ভাই এবং বিপ্লব দাদারা তাঁদের সময়ে সেরা ছিলেন। এখন আমি কতটুকু দিতে পারতেছি টিমে, সেটা নিয়েই চিন্তা করি। আমি কখনও নিজেকে সেরা মনে করি না। যে ম্যাচ চলে যায়, সেটাই শেষ। আমি পরের ম্যাচের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি।

 রক্ষণভাগে যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া তো দারুণ ছিল। 

জিকো : এটা সহজ হয়েছে আমরা একই ক্লাবে খেলার কারণে। আমাদের কমিউনিকেশন ভালো। আমরা টিমে যারা ছিলাম, তারা সবাই একে অন্যকে সহযোগিতা করত। ভুল করলে আমরা একজন আরেকজনকে বকা দিতাম। একে অন্যের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো ছিল, আমরা ভালো করেছি।

 ২০০৯ সালের পর সাফের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ। আরেক ধাপ পেরোলে শিরোপা মঞ্চে। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেও টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার কষ্টটা নিশ্চয়ই অনেক বেশি। 

জিকো : কেউ কিন্তু প্রত্যাশা করেনি আমরা সেমিফাইনালে খেলব। অনেকে অনেক কথা বলেছেন। আমরা নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়েছি। ফাইনাল খেলতে পারলে তো এটা অবশ্যই বড় কিছু হতো। শিরোপা মঞ্চে উঠলে দেশবাসী অনেক খুশি হতো। এখন এটা ভুলে গিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে হবে আমাদের। কীভাবে সামনে আরও ভালো করতে পারি, সেই চেষ্টা করতে হবে। আমি মনে করি, এই পারফরম্যান্স যদি আমরা ধরে রাখতে পারি, তাহলে র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হবে এবং সাফের মতো আরও টুর্নামেন্টে ভবিষ্যতে শিরোপা জিতব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.