মামলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ২০ জনের নাম অন্তর্ভুক্তের আবেদন

0
95
শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ২০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নিহত হারুনুর রশিদ খানের ছেলে ও মামলার বাদী আমিনুর রশিদ খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর এই আবেদন করেন। আজ বুধবার দুপুরে তথ্য জানান মামলার বাদী।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ৬টার দিকে শিবপুরের বাড়িতে ঢুকে উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদকে গুলি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর পিঠ থেকে দুটি গুলি বের করা হয়। ৯৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩১ মে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান হারুনুর রশিদ খান। তিনি শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

এর আগে হারুনুর রশিদ খান গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুই দিন পর তাঁর ছেলে আমিনুর রশিদ খান বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন শিবপুরের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার, ইরান মোল্লা ও হুমায়ুন, পূর্ব সৈয়দনগরের মো. মহসিন মিয়া, মুনসেফেরচরের মো. শাকিল ও নরসিংদী শহরের ভেলানগরের গাড়িচালক নূর মোহাম্মদ। তাঁদের মধ্যে শাকিল, নূর মোহাম্মদসহ ১১ জন কারাগারে আছেন। নূর মোহাম্মদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদনে যে ২০ জনের নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া ও তাঁর ভোট ভাই জুনায়েদুল হক ভূঁইয়া, আসাদুজ্জামান, ফরহাদ আলম ভূঁইয়া, দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, সৈয়দ মাসুদ পারভেজ, ফারুক খান, সিরাজ মিয়া, বাদল মিয়া, আশরাফুল ইসলাম, সুমন মিয়া, আমান উল্লাহ ভূঁইয়া, রাকিবুল ইসলাম, কাউছার মিয়া, শাহাদত হোসেন, মো. সেলিম, সজিব মোল্লা, আরমান পাশা, শাওন খান ও বাবুল মিয়া।

মামলার বাদী আমিনুর রশিদ খান বলেন, ‘আমার বাবাকে গুলি করে হত্যার জন্য যে তিনজন বাড়িতে ঢুকেছিলেন, তাঁরা সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়ার কর্মী। ঘটনার পর থেকে সংসদ সদস্য হত্যাকারীদের বিচার দাবি না করে উল্টো তাঁদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন। যাঁরা গুলি করেছেন, তাঁদের গ্রেপ্তারে কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি যাঁরা মদদ দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁরাও প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের সঙ্গে সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে বেড়াচ্ছেন।’

বাদীর অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান ছিলেন আমার পিতৃতুল্য অভিভাবক। তাঁর এমন মৃত্যুতে আমি অভিভাবক হারিয়ে ব্যথিত। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি চিহ্নিত মহল ষড়যন্ত্র করছে।’

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, মামলায় সংসদ সদস্যসহ ২০ জনের অন্তর্ভুক্তির আবেদনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। মামলাটির তদন্তভার শিবপুর থানা থেকে আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে। এই মামলায় এজাহারভুক্ত ২ জনসহ ১১ জন কারাগারে। প্রধান আসামি আরিফ সরকারসহ এজাহারভুক্ত চারজন আসামি বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশ।

শিবপুর উপজেলা পরিষদের নিহত চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানের বড় ভাই সাবেক সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খান ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে ফেরার পথে গুলিতে নিহত হন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.