মণিপুর নিয়ে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চান বিরোধীরা

0
102
দ্রৌপদী মুর্মু

ভারতের সহিংসতাকবলিত মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভারতের বিরোধী দলগুলোর নেতারা। গতকাল বুধবার ৩১ জন বিরোধী নেতা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে মণিপুর নিয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতিকে বিরোধী নেতারা বলেছেন, ওই রাজ্যে কী ঘটেছে ও ঘটে চলেছে, তা স্বচক্ষে অনুধাবন করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচিত সেখানে যাওয়া। সেখানকার সহিংসতা ও অরাজকতার দায় সরকারকেই নিতে হবে; অথচ সরকার পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

রাষ্ট্রপতিকে বিরোধী নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এত জায়গায় যাচ্ছেন, কিন্তু মণিপুর যাচ্ছেন না। এত বিষয়ে কথা বলছেন, কিন্তু মণিপুর নিয়ে তিনি চুপ। সংসদে এ নিয়ে এখনো কোনো বক্তব্য পেশ করলেন না। প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব সচেতন করে তোলার জন্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন তাঁরা।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র পার্লামেন্ট সদস্যরাও, যাঁরা কদিন আগে মণিপুর ঘুরে এসেছেন। নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেন, মণিপুরে বিবদমান দুই শিবিরের দুই নারীকে তিনি যেন রাজ্যসভায় মনোনীত করেন।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতিকে তাঁরা মণিপুরের প্রকৃত পরিস্থিতি কী, তা জানিয়েছেন। নারী, শিশুদের ওপর কী অত্যাচার হচ্ছে, তা বলেছেন। সরকারের কোনো অস্তিত্বই সেখানে নেই।

খাড়গে বলেন, তাঁদের মূল দাবি প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয়তা। অথচ তিনি সংসদকে এড়িয়ে চলেছেন। সরকার যে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন, তা বুঝতে দিচ্ছেন না। সংসদকে এড়ানো মানে দেশকে এড়ানো। এই ঔদাসীন্য কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দায়বদ্ধ করে তুলতে তাঁরা রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন। বিরোধী নেতাদের মধ্যে ইন্ডিয়া জোটের সব শরিক দলের সদস্যরা ছিলেন।

মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের এই সক্রিয়তা সত্ত্বেও সরকার এখনো নির্বিকার। লোকসভা বা রাজ্যসভায় এখনো বিরোধীদের দাবি মেনে মণিপুর নিয়ে আলোচনায় সরকারপক্ষ রাজি নয়। ফলে দুই কক্ষের অধিবেশন বারবার মুলতবি হচ্ছে। গতকালও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

এই অচলাবস্থার মধ্যে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় গতকাল বিরোধী সদস্যদের জানান, প্রধানমন্ত্রীকে সভায় হাজির হওয়ার নির্দেশ তিনি দিতে পারবেন না; দেবেনও না। সভায় এসে বিবৃতি দিতে তাঁকে বাধ্য করতে পারেন না। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সভায় আসা না আসার অধিকার সব সদস্যের মতো প্রধানমন্ত্রীরও আছে। তিনি বাধ্য করতে পারেন না; করবেনও না। চেয়ারম্যানের এই মন্তব্যের পর বিরোধীরা রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করেন।

রাজ্যসভায় বিরোধীরা মনে করছেন, কোনোভাবেই তাঁরা সভাধ্যক্ষের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। সভাধ্যক্ষ নিয়মকানুনের ব্যাখ্যাও তাঁর নিজের মতো করে করছেন। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় কি না, বিবেচনা করছেন। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে তাঁরা এক দফা আলোচনাও করেছেন।

লোকসভায় গতকাল অন্য দৃশ্য দেখা যায়। স্পিকার সারা দিনে একবারের জন্যও সভায় আসেননি। সভার কাজ চালান প্যানেলে থাকা সদস্যরা। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, সরকার ও বিরোধী দুই পক্ষের সদস্যদের ‘অসহযোগিতায়’ স্পিকার বীতশ্রদ্ধ ও ব্যথিত। তিনি আহতও বোধ করছেন। সদস্যরা সভার মর্যাদা রক্ষা না করলে তিনি সভায় আসবেন না বলে ঠিক করেছেন। মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে গতকাল লোকসভায় কোনো কাজই হয়নি।

মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহিতে বাধ্য করাতে বিরোধীরা লোকসভায় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। ৮ ও ৯ আগস্ট তা নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী জবাব দেবেন ১০ আগস্ট।

গত ৩ মে মণিপুরে মাইতি ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। এতে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি। সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির ও গির্জা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গৃহহীনের সংখ্যা অন্তত ৬০ হাজার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.