ভূমিকম্পের ১০ দিন পর জীবিত উদ্ধার হলো এক কিশোরী

0
90
ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে কিশোরীকে। ছবি: রয়টার্স

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়া ও তুরস্কে সবশেষ মৃতের সংখ্যা জানা গেলেও এই দুই দেশে ঠিক কী পরিমাণ মানুষ নিখোঁজ, তা এখনো জানা যায়নি। গত মঙ্গলবার রাতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কেই মৃত্যু ৩৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া আরও ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ১৩ হাজার মানুষ এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তুরস্কের আনতাকিয়ায় ৯ দিন পর উদ্ধার হওয়া এক মা ও তাঁর দুই সন্তানের অবস্থা সম্পর্কে উদ্ধারকারী মেহমেত এরিলমাজ জানান, বেঁচে যাওয়া ওই নারীর নাম ইলা। উদ্ধারের সময় তাঁর জ্ঞান ছিল। মেহমেত বলেন, ‘আমি তাঁর হাত ধরি। তিনি তখন কথা বলে ওঠেন। আমরা তাঁকে সান্ত্বনা দিই। এরপর আমরা কাজ চালিয়ে যেতে থাকি। আমরা খুশি যে আমরা জীবিত হিসেবে পঞ্চম কাউকে উদ্ধার করলাম।’

উদ্ধারকারী মেহমেত ও তাঁর দল খনিতে উদ্ধারকাজ চালানোয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, উদ্ধারের সময় ইলা প্রথমেই পানি চেয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক দল না আসা পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, আজ কী বার? ইলা ও তাঁর দুই সন্তানকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া স্বাস্থ্যকর্মী আলী পারলাস বলেন, তিনজনের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের অবস্থা ভালো ছিল।

এদিকে তুরস্কের আদিয়ামান শহরের একটি সাততলা অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসস্তূপ থেকে মঙ্গলবার গভীর রাতে ৭৭ বছর বয়সী এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম ফাতমা গুঙ্গর। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, ভূমিকম্পের প্রায় ২১২ ঘণ্টা পর ফাতমাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফাতমা উদ্ধার হওয়ার পর স্বজনেরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাঁরা উদ্ধারকারী দলকে জড়িয়ে ধরেন।

অক্ষত ভবন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে এই অঞ্চলের প্রতিটি শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভূমিকম্পের পরপরই তুরস্কের এসব শহর পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। সেই পথে হাঁটতে শুরু করল দেশটি। প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে, যেসব ভবনের বেশির ভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।

ভূমিকম্পে তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হাতায় প্রদেশ। সরকার বলছে, সেখানকার শহরগুলোর অর্ধেকের বেশি ভবন হয় ধসে গেছে, নয়তো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া অনেক ভবন এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী করার কোনো উপায় নেই।

এ প্রসঙ্গে তুরস্কের পরিবেশ ও গৃহায়ণবিষয়ক মন্ত্রী মুরাত কুরুম এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, যেসব ভবন একবারে গুঁড়িয়ে দেওয়া দরকার, সেগুলো দ্রুত গুঁড়িয়ে দেব আমরা। এসব স্থানে নিরাপদ বাড়ি নির্মাণ করা হবে।’

উদ্ধারকর্মীরা ফিরে যাচ্ছেন

বিভিন্ন দেশ থেকে যাঁরা উদ্ধারকাজে অংশ নিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় গিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের কার্যক্রম প্রায় গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেক উদ্ধারকর্মী ইতিমধ্যে ফিরে গেছেন নিজ দেশে। বাকিরা ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
তবে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এরদোয়ান বলেন, ‘ধসে যাওয়া ভবনের নিচে পড়ে থাকা শেষ নাগরিকটিকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত আমরা অভিযান চালিয়ে যাব।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.