ভালো ক্যামেরা ফোন বেছে নেবেন কীভাবে

0
130
ভালো ক্যামেরা ফোন

আপনি কি ছবি তুলতে ভালোবাসেন, স্মার্টফোন খুঁজছেন ফটোগ্রাফির জন্য? আবার হয়তো বাজেটও অনেক বেশি নেই। তাহলে মিড বাজেটে সুন্দর ফটোগ্রাফি হবে এমন স্মার্টফোন কী কী দেখে কেনা উচিত চলুন জেনে নেওয়া যাক।

মিডবাজেটে যেসব শর্ত পূরণ করলে একটা স্মার্টফোনকে ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ ফোন বলা যাবে:

মেগাপিক্সেল: আজকাল এটা অনেকেই জানি, মেগাপিক্সেল দেখে ফোন কেনার মানে হয় না। ক্যামেরা যত বেশি মেগাপিক্সেল, ছবি তত ভালো আসবে- এ কথার কোনো ভিত্তিই নেই। কারণ একটা ফোনে ২০০ হোক বা ১০৮ মেগাপিক্সেল হোক, তার চেয়ে ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ফোন আরও ভালো পারফরমেন্স দিতে পারে। তাহলে মেগাপিক্সেল যদি আমরা না দেখি তার বদলে কী দেখব?

দেখব সেন্সরের আকার কত বড়। ১২ মেগাপিক্সেলের অনেক ক্যামেরায় ১০৮ মেগাপিক্সেলের চেয়ে বড় সেন্সর থাকতে পারে এবং সেটাই ভালো ফটোগ্রাফির জন্য বেশি কার্যকর। আগে স্মার্টফোনে বেশ ছোট সেন্সর ব্যবহার করা হলেও, এখন আশার কথা এই যে- এক ইঞ্চি আকারের সেন্সরও স্মার্টফোনে ব্যবহার হচ্ছে। সুতরাং যত বড় সেন্সর হবে ক্যামেরাটি তত বেশি আলো ক্যাপচার করতে পারবে, ছবিতে তত বেশি ডিটেইলস থাকবে এবং তত ভালো ছবি উঠবে।

অ্যাপারচার: স্মার্টফোনে ভালো ফটোগ্রাফি করতে গেলে দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অ্যাপারচার। আমরা অনেকে ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেল সেটা দেখে ফোন কিনি, কিন্তু তার অ্যাপারচার কত সেটা খেয়াল করি না। সাধারণত স্মার্টফোনে ক্যামেরার নিচে অথবা বক্সের গায়ে লেখা থাকে অ্যাপারচার এফ ১.৮ অথবা এফ ২.০। এই সংখ্যাটা যত কম হবে, অ্যাপারচারের আকার তত বড় বুঝতে হবে। আর আকার যত বড় হবে, বাইরে থেকে আলো তত বেশি আসবে এবং সেই আলো ক্যাপচার করে একটি ভালো ছবি আপনাকে দিতে পারবে। কিন্তু অ্যাপারচারের এই নম্বরটা এফ নম্বরটা ১.৪ পর্যন্তই ম্যাক্সিমাম হয়। এর থেকে নিচে আর আসে না। তাই আপনার পছন্দের তালিকায় এফ ১.৪ অ্যাপারচার আছে এমন ফোন রাখতে পারেন, অন্তত এফ ১.৮ আছে এমন স্মার্টফোন খুঁজতে পারেন। কমদামি স্মার্টফোনে এই অ্যাপারচার এফ ৪.০ অবধি যায়, সেখানে লো লাইট ফটোগ্রাফি খুবই বাজে হয়।

ক্যামেরার সংখ্যা: আমরা যেহেতু একটা মিডরেঞ্জের বেস্ট ক্যামেরা ফোন নিয়ে আলোচনা করছি, সেহেতু এই পয়েন্টটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায়, একটা ভালো ক্যামেরা ফোন বোঝাতে কোম্পানি আমাদের বিভিন্নভাবে বোকা বানায়। তারা ফোনে অনেকগুলো ক্যামেরা দেয়। ৩টি থেকে শুরু করে সাত-আটটি পর্যন্ত ক্যামেরা বসিয়ে দেয়। অথচ এতগুলো ক্যামেরার দরকারই নেই। ভালো ফটোগ্রাফির জন্য ম্যাক্সিমাম তিনটি ক্যামেরা দরকার। একটি হলো ‘প্রাইমারি সেন্সর’, যেটা ভালো হতেই হবে। দ্বিতীয়টি হলো ‘আলট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স’। এই লেন্সটা যত বেশি মেগাপিক্সেল হবে, ন্যূনতম ১২ মেগাপিক্সেল হলে তাতে ছবির ডিটেইলস বেশি থাকবে। আর তৃতীয় ক্যামেরাটি হতে হবে ‘টেলিফটো জুম লেন্স’। এই লেন্সের মানে আপনি কারও ঘরের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখবেন বিষয়টা এমন না। টেলিফটো লেন্স মূলত দরকার পোট্রেট ছবির জন্য। অনেক কোম্পানি টেলিফটো লেন্স দেয় কিন্তু তা দিয়ে পোট্রেট ছবি তোলা যায় না। তাই ফোন কেনার আগে অবশ্যই এটি যাচাই করে নিতে হবে।

এখন অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে ‘ম্যাক্রো লেন্স’ থাকবে না কেন। আপনারা অনেকেই জানেন, কোম্পানি চাইলে ম্যাক্রো লেন্স ‘আলট্রা ওয়াইড লেন্সের’ মধ্যেই দিয়ে দিতে পারে।

আরেকটি কথা জানা থাকতে হবে- স্মার্টফোনের এই তিন ক্যামেরার ছবি অবশ্যই যেন একটি আরেকটির কাছাকাছি হয়। মানে, এক ক্যামেরার ছবি খুব ভালো, আরেক ক্যামেরার ছবি কালো হয়ে যায়, এমন যেন না হয়, সেটি আগেই যাচাই করে নিতে হবে।

ওআইএস: স্মার্টফোনের ক্যামেরার বেশকিছু বিষয় যাচাইয়ের পর এবার যাচাই করতে হবে সেখানে অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার (ওআইএস) আছে কিনা। অর্থাৎ আপনি যখন ছোটাছুটি করে ছবি বা ভিডিও ক্যাপচার করবেন, আপনার ক্যামেরা যখন নড়বে তখন ফুটেজ বা ছবি নড়বে না। এটা শুধু ভিডিওর জন্য কাজে লাগে না, নাইট ফটোগ্রাফিতে দুর্দান্ত কাজ করে। কারণ, আমরা যখন ফটো তুলি তখন স্বাভাবিকভাবেই হাত একটু কেঁপে যায়, আর সেটা নাইট ফটোগ্রাফিতে অনেক প্রভাব ফেলে। এই ওআইএস নাইট ফটোগ্রাফিতে হাত কাঁপলেও তুলনামূলক ভালো ছবি ক্যাপচার করে দেয়।

অনেক কোম্পানি ক্যামেরায় ওআইএস না দিয়ে ইলেকট্রনিকস ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার (ইআইএস) দিয়ে দেয়। যেটি ভিডিও ফুটেজকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রসেসিং করে। কিন্তু তবুও ইআইএস কখনও ওআইএসের মতো পারফর্ম করতে পারে না। তবে দামি ফোনের ক্ষেত্রে ইআইএস ফ্রেম ক্রপ করে ভালো ভিডিও করে দিতে পারে, কিন্তু কমদামি বা মিডরেঞ্জের ফোনের ক্ষেত্রে এটি ততটা কার্যকর না।

প্রো অথবা ম্যানুয়াল মুড: ভালো ক্যামেরা বোঝার জন্য অনেক সময় আমরা অনেক ফিল্টার আছে কিনা তা দেখি। কিন্তু আসলে দেখা উচিত ক্যামেরায় প্রো বা ম্যানুয়াল মুড আছে কিনা। এটার ব্যবহার শিখে গেলে আপনি দারুণ সব ছবি তুলতে পারবেন ফিল্টার ছাড়াই।

এফপিএস: ভিডিওগ্রাফির ক্ষেত্রে আরেকটি জিনিস আমরা খুবই অবহেলা করি। সেটি আমরা হয়তো বুঝি না বলেই অবহেলা করি। আজকাল বিভিন্ন কোম্পানি গিমিকের জন্য ১২০ এফপিএস, ২৪০ এফপিএসে ভিডিও রেকর্ড করা যাচ্ছে বলে বিজ্ঞাপন দেয়। আসলে ওগুলো কোনো কাজের না। এখন যে সময় চলছে, ভালো ভিডিও পেতে আপনাকে ফোরকে ৩০ অথবা ফোরকে ৬০ এফপিএসে ভিডিও রেকর্ড করার সুবিধা দিচ্ছে কিনা এমন স্মার্টফোন দেখে নেবেন। এটি থাকলে ঝকঝকে ডিটেইলস ভিডিও পাওয়ার পাশাপাশি ইচ্ছেমতো এডিটিং করতে পারবেন।

প্রসেসর: সবচেয়ে শেষে যে বিষয়টি খেয়াল করা লাগবে, সেটা হলো প্রসেসর। আপনার ফোনের প্রসেসর যত ভালো হবে, ছবি ও ভিডিও প্রসেসিং করার ক্ষমতা তত ভালো হবে। তাই বাজার যাচাই করে সবচেয়ে লেটেস্ট এবং ভালো মানের প্রসেসর দেখে স্মার্টফোন কেনার চেষ্টা করবেন। তাহলেই দুর্দান্ত সব ছবি আর ভিডিও পাবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.