‘বোমা হামলার চেয়েও ভয়াবহ ছিল ভূমিকম্পের আঘাত’

0
125
ভয়াবহ ছিল ভূমিকম্পের আঘাত'

‘সোমবার রাতে ভূমিকম্প যখন আঘাত হানে তখন মনে হচ্ছিল পুরো বাড়িটি আমাদের ওপর ভেঙ্গে পড়বে। মনে হচ্ছিল, দ্রুতই আমরা মারা যাচ্ছি। ওই সময় বিদ্যুৎও চলে যায়। পরে দৌড়ে আমরা বাড়ি থেকে বের হই। চারদিক থেকে চিৎকার, কান্না আর হাহাকার শুনতে পাচ্ছিলাম। বাইরে ছিল প্রচন্ড ঠান্ডা আর বৃষ্টি।  সিরিয়ায় বোমাবর্ষণের চেয়েও খারাপ ছিল পরিস্থিতি। যখন বোমা মারতে আসে তখন বিমানের শব্দ শোনা যায়। জানতেও পারা যায় বিমান আসছে। সেই সময় লুকিয়ে পড়া যায়। কিন্তু ভূমিকম্প কখন আঘাত করবে তা কেউ জানে না।’

ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়ার পর আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন চার সন্তানের জননী উম হাদী নামে এক সিরীয় শরণার্থী নারী। তিনি সিরিয়ার সীমান্তবর্তী হাতাই প্রদেশের রেহানলি শহরে বসবাস করেন। সিরিয়ার যুদ্ধে তিনি স্বামীকে হারিয়েছেন। সাত বছর আগে সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য সীমান্তের এপারে পালিয়ে এসেছিলেন।

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ধারাবাহিক ভূমিকম্পের দুই দিন পরও এখনো দেশের কিছু এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি ত্রাণ সহায়তা। প্রায় ৫ লাখ সিরীয় শরণার্থীর আবাসস্থল হাতা প্রদেশটি ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পে হাতাইয়ের আন্তাকিয়ার কাছে রাস্তা এবং বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রাণ পৌঁছতে পারছে না। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সেই এলাকার বাসিন্দারা। তাদেরই একজন উম হাদী।

উম হাদী জানান,ভূমিকম্পের সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে তারা ঠান্ডার মধ্যে একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনও মাটি কাঁপছিল। ওই সময় ঠান্ডা থেকে বাঁচতে তারা আগুন জ্বালান। চারিদিকে ধ্বংসস্তূপ। কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। ঘরে ফিরতেও ভয় হচ্ছিল।

উম হাদী বলেন, দুই রাত বাইরে চেয়ারে বসে ঠান্ডায় কাটিয়েছি। এক মিনিটের জন্য ঘুমাতে পাারিনি। আবারও আমরা গৃহহীন হয়ে পড়লাম।

তিনি আরও বলেন, এখনও বিদ্যুৎ, পানি , জ্বালানি নেই। হাসপাতালগুলো সব ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানেও ভূমিকম্পে মানুষ মারা গেছে। আমরা শুনেছি , ভূমিকম্পে মসজিদের মিনার একটি গাড়ির উপর পড়ায় ভেতরে থাকা মানুষগুলো মারা যায়। এরকম আরও অনেক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।

তিনি জানান, আজ, সরকারি সংস্থা থেকে থাকার জন্য কয়েকটি তাঁবু  লাগিয়েছে কিন্তু আমাদের কাছে কোনও সাহায্য পৌঁছেনি। কেউ আমাদের সাহায্য করতে আসেনি।

উম হাদী জানান, বেকারিগুলো কাজ করছে না। পাউরুটি কিনতে চাইলেও খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি তার সন্তানদের খাবার কেনার জন্য পুরো শহরে ঘুরেছেন। কিন্তু বিস্কুট আর সামুন (এক ধরনের বান) ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাননি। সব কিছুর দামও বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ।

ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া তিন সন্তানের জননী আরেক নারী উম খালিদ বলেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ যে আমরা বেঁচে আছি। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে আমরা ঠান্ডা-বৃষ্টির মধ্যে বাইরে বসে আছি। আমার চোখের সামনে ঠান্ডায় বাচ্চারা কাঁপছে। একজন অসুস্থও হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্পে অনেক স্বজন হারিয়েছি। আমার চাচাতো ভাই তার স্ত্রী ও সন্তানদের হারিয়েছে; আরেক আত্মীয় সিরিয়ায় তার সন্তানদের হারিয়েছে। এত মানুষ মারা গেল। বাড়ির ভিতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। আমার দোতলা বাড়িটি ধসে না পড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধারকারীরা বলছেন, বাড়িগুলো নিরাপদ নয় এবং আমাদের ভিতরে যাওয়া উচিত নয়।

উম খালিদ  বলেন, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। খাওয়ার পানি কিনে খাচ্ছি। সবাই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

উম খালিদ জানান, গতকাল রাতে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি একটি করে সামুন দিয়েছে। তাদের চারজনের জন্য একটি সামুন বরাদ্দ পেয়েছেন।

উম খালিদ বলেন, রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় আমরা অন্য কোথাও যেতে পারছি না। এখানে কোনো সাহায্য সংস্থা নেই, কোনো সরকারি সাহায্য নেই।

তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্পের আগে থেকেই পরিস্থিতি খারাপ ছিল। ভাড়া বাড়ছিল, সব কিছুর দামও বাড়ছিল। ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.