বিধির বেড়াজালে বন্ধ নিয়োগ

0
89

শুধু একটি বিধিমালার অভাবে সরকারি চাকরিতে আটকে আছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নিয়োগ। নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য ২০১৪ সালের বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। এই বিধিমালার খসড়ার নথি বেশ কিছুকাল ধরেই চালাচালি হচ্ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মধ্যে। তবে কিছুতেই চূড়ান্ত হচ্ছে না। ফলে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রত্যাশীদের অপেক্ষার প্রহর কেবল বেড়েই চলেছে। হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন তাঁরা।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বিসিএসে ‘ক্যাডার’ পদের মতো ‘নন-ক্যাডার’ পদের সংখ্যাও উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দিতে চায় পিএসসি। এ জন্য গেল বছরের ২৩ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠিও দেয় পিএসসি। তবে এ সিদ্ধান্তে একমত হতে পারেননি নন-ক্যাডার পদের নিয়োগপ্রার্থীরা। তাঁরা চান আগের মতোই প্রতি বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে পরবর্তী বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির আগ পর্যন্ত নন-ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়া হোক।

তাঁরা বলছেন, নতুন নিয়ম কার্যকর হলে একেকটি বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে প্রার্থীদের নিয়োগ কমে যাবে। বিপুলসংখ্যক প্রার্থী সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হবেন। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার তালিকায় অপেক্ষমাণ প্রার্থীরা গত বছর এবং এ বছর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিএসসির ফটকের সামনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। এ সময় তাঁরা ৬ দফা দাবিও উত্থাপন করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের বিধি ২০১৪ সালে একবার সংশোধন করা হয়েছিল। ওই বিধিতে বলা আছে, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বিগত ২৮তম থেকে ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য সরকার বিধি সংশোধন করে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দিয়েছিল।

এখন একইভাবে ৩৫তম থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। সে জন্য বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই সংশোধিত বিধিটি চূড়ান্ত না হওয়ায় আটকে আছে নন-ক্যাডার পদের সব নিয়োগ।

জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিধির সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে। এই প্রথমবারের মতো সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। দ্রুতই এটিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, এতে লাভবান হবে নন-ক্যাডার পরীক্ষার্থীরা। তাঁরা না বুঝেই এতদিন আন্দোলন করেছিল। বর্তমান কমিশন পরীক্ষার্থীবান্ধব। ৪০তম বিসিএস থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নন-ক্যাডার নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।

জানা গেছে, নতুন বিধিমালা এখনও অনুমোদন না হওয়ায় ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ আছে। বিধিমালা জারি হলেই ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ফলাফল বিধিমালার আলোকে প্রকাশ করতে পারবে পিএসসি। এ জন্য সংস্থাটি প্রস্তুতও আছে।

এরই মধ্যে চার ধাপে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে চার সহস্রাধিক চাহিদা পেয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। উত্তীর্ণ ৮ হাজার ১৬৬ জনের মধ্যে নন-ক্যাডার পদে ৪০ম বিসিএসে অপেক্ষমাণ আছেন ৬ সহস্রাধিক পরীক্ষার্থী।

পিএসসিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ জনের মতো প্রথম শ্রেণির; অর্থাৎ নবম গ্রেডের শূন্য পদের তালিকা এসেছে। এ ছাড়া ১০ম গ্রেডে আরও সাড়ে ৭০০, ১১তম গ্রেডে ৮০-এর মতো এবং ১২তম গ্রেডে ১ হাজার ৭০০-এর মতো পদ রয়েছে। এত বিপুলসংখ্যক নন-ক্যাডার আগে কোনো বিসিএস থেকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করার নজির নেই।

পিএসসি কর্মকর্তারা জানান, নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রমের বৈধতা চেয়ে গত বছরের ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।

এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। ৩৫তম থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা চাওয়া হয় ওই চিঠিতে। নতুন বিধি সংশোধন হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তা চূড়ান্ত করা হলে পরবর্তী নন-ক্যাডার নিয়োগ দিতে পারবে পিএসসি। ওই বিধি এখনও পাস না হওয়ায় ঝুলে আছে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভাগ্য।

৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদের নিয়োগ প্রার্থী মোহাম্মদ আসিফ নূর বলেন, বিধিমালার গেজেট জারির আগেও পিএসসি চাইলে আমাদের নিয়োগের সুপারিশ করতে পারে। এতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

তামান্না তানিয়া খান নামের আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৪০তম বিসিএসের সার্কুলার হয়েছিল। করোনার দুই বছরসহ আরও নানা কারণে এরই মধ্যে ৬ বছর পার হতে চলেছে। আমাদের অনেকেরই সরকারি চাকরির বয়স শেষ। আর কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না। তাই এই নিয়োগের দিকে আমরা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছি।

তিনি বলেন, বিধির গ্যাঁড়াকলে আমাদের ভাগ্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এখন শুনছি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত নথি ফের জনপ্রশাসনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ৪০তম বিসিএসে পাস করা ও নন-ক্যাডারের অপেক্ষায় থাকা আমরা ৮ হাজার ১৬৬ জন যেন জীবন্ত লাশ।

রফিকুল ইসলাম নামের অপর এক প্রার্থী বলেন, নন-ক্যাডার পদের চাকরি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা শুধু বাড়ছেই। বয়স চলে যাচ্ছে, চাকরির অভাবে অনেকে বিয়ে পর্যন্ত করতে পারছেন না। আমাদের কষ্ট কাউকে স্পর্শ করে না। কারণ এমন কোনো আইন নেই যে, নীতিমালা সংশোধনের গেজেটের আগে ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের সুপারিশ করা যাবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.