বিদ্যুতের খুঁটি বসানো নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১, আগুন ৫০ বাড়িতে

0
116
পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিদ্যুতের খুঁটি বসানো নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন। এ ঘটনায় অন্তত ৫০টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।

আজ রোববার ঘটে এই ঘটনা। নিহত সাজ্জাদুল হক মণ্ডল (৬৫) রামগোপালপুর ইউনিয়নের পাঁচাশি গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানান, পাঁচাশি গ্রামে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ শুরু করে সম্প্রতি। কিন্তু এই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ান গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া এবং চন্দন মিয়ার লোকজন। বিদ্যুতের লাইনটি স্থাপিত হলে গরিব মানুষের ঘরবাড়ি এবং গাছের ক্ষতি হতে পারে- এমন কথা জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে আবেদন করেন তাঁরা। এ কারণে দুই মাস ধরে কাজ বন্ধ।

অন্যদিকে লাইনটি নির্মাণের দাবি জানান গ্রামের এনামুল হক মণ্ডল। তাঁদের পক্ষে এলাকাবাসীর স্বাক্ষর নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি লাইনটি নির্মাণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দেন। এ অবস্থায় রোববার সকালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন পুলিশ নিয়ে বিরোধপূর্ণ স্থানে বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে এনামুল হকের ভাই সাজ্জাদুল হক মণ্ডল গুরুতর আহত হন। তাঁকে ভর্তি করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এর মধ্যে বিরোধপূর্ণ স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন সম্পন্ন করা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে খবর আসে মারা গেছেন সাজ্জাদুল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকার অন্তত ৫০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিরোধের আগুনে এলাকার বাড়িঘর পুড়লেও ফায়ার সার্ভিস নেভাতে যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এলাকার অন্তত ৫০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়

তবে ফায়ার সার্ভিসের দাবি, আগুন নেভাতে গেলে দমকল কর্মীরা হামলার শিকার হতে পারেন বলে তাদের কাছে খবর আসে। এ কারণে ঘটনাস্থলে যেতে সাহস করেনি তারা।

স্থানীয় তোফায়েল আহমেদ ও খোরশেদ আলী জানান, জোর করে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করা নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। একজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অসহায় হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

রামগোপালপুর ইউনিয়নের পাঁচাশি গ্রামটি বিদ্যুৎ বিভাগের ঈশ্বরগঞ্জ এলাকার নিয়ন্ত্রণাধীন। পিডিবির ঈশ্বরগঞ্জের আবাসিক প্রকৌশলী ইমতিয়াজ মামুন বলেন, বিদ্যুতের লাইন স্থাপন নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ থাকায় ঠিকাদারকে লাইনটি নির্মাণে নিষেধ করা হয়েছিল। রোববার কাজ করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। দুই পরিবারের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে বিরোধ।

তবে বিদ্যুৎ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কাজ করার বিষয়ে জানতে ঠিকাদার হারুনকে ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনির সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, এনামুলদের পক্ষে বিদ্যুতের খুঁটিটি স্থাপনের দাবি ছিল। তবে বাধা দিচ্ছিল শিমুল ও লাজুকদের পক্ষ। পুলিশ ও ঠিকাদারের লোকজন নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করতে যাওয়ার আগেই মারামারি হয়। পরে দুই পক্ষকে শান্ত করে বিদ্যুতের খুঁটিটি স্থাপন করে ফেরার পথে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এতে বিক্ষুব্ধ লোকজন ৩০টির মতো বাড়িতে আগুন দিয়েছে। ওই সময় তাঁর সঙ্গে মাত্র তিনজন পুলিশ থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।

এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.