বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপে বেসরকারি খাত

0
111

সংকটের কারণে বিদেশি ঋণসহ নানা উপায়ে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে চাইছে সরকার। তবে রেমিট্যান্স কমছে। কমেছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি। এর মধ্যেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপে পড়েছে বেসরকারি খাত। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে বেসরকারি খাত যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ নিয়েছে, পরিশোধ করতে হয়েছে তার চেয়ে ৩ দশমিক ৪১ বিলিয়ন বা ৩৪১ কোটি ডলার বেশি। এ সময়ে আগের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার। আর নতুন ঋণ এসেছে ১ হাজার ৫৯৭ কোটি ডলার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা উপায়ে আমদানি কমানো এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধির পরও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সংকটের বড় কারণ ঋণ পরিশোধের চাপ। নানা কারণে এখন বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ আসছে কম। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ সুদহার অনেক বাড়িয়েছে। ফলে এসব দেশে ডলার চলে গেছে। এর মধ্যে দুবাইভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংকের দেনা পরিশোধে বাংলাদেশি কয়েকটি ব্যাংকের দেরি হয়েছে। এ খবরে বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে খারাপ বার্তা গেছে। আবার অনেক উদ্যোক্তা এখন ঋণ নিতে চাইছেন না। কেননা বছর দুয়েক আগে ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদে বিদেশি ঋণ পাওয়া যেত। গত দুই বছরে সুদহার অনেক বেড়ে এখন ৯ শতাংশের ওপরে উঠেছে। এ সময় ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩০ শতাংশের মতো। আগামীতে ডলারের দর বা সুদহার কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কেউ জানে না। যে কারণে অনেকে ঋণ নিতে চাইছেন না।

ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা শুরুর পর বিশ্ববাজারে সুদহার তলানিতে নামে। তখন বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ বেশ বেড়ে যায়। এখন এসব ঋণ পরিশোধের চাপ তৈরি হয়েছে। করোনার আগের বছর ২০১৯ সাল শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণস্থিতি ছিল মাত্র ৮২১ কোটি ডলার। মাত্র আড়াই বছরে তা বেড়ে গত বছরের জুন শেষে ১ হাজার ৭৭৬ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। এর পর থেকে আবার কমছে। গত জুলাই শেষে ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ডলারে নেমেছে। আর গত ডিসেম্বর শেষে ছিল ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার। এর মানে ঋণ যত দ্রুত বেড়েছিল, কমছেও সেভাবে।

বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, মাঝে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে ভালো ব্যবসা হচ্ছিল। এখন তহবিল কম পাওয়া যাচ্ছে। আবার বিদেশি ঋণের সুদহার অনেক বেড়েছে। আবার ডলারের বিপরীতে টাকার অনেক অবমূল্যায়ন হয়েছে। যে কারণে এখন অনেকে ঋণ নিতে চাইছেন না। শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতির তেমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানির জন্য স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ নেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা এবং বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে গত অর্থবছরে মূলধনি পণ্যের আমদানি ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলারে নেমেছে। মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি প্রায় ২০ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৪২৭ কোটি ডলারে নেমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় অনেক বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে বিদেশি সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৩৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। আর মূল পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৯৯ কোটি ডলার। গত বছর ৩ হাজার ৭২৬ কোটি ডলারের নতুন ঋণের বিপরীতে পরিশোধ করতে হয় ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলার। যেখানে সুদ পরিশোধ ছিল মাত্র ২৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যে কারণে গত দুই বছরে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ২ হাজার ৩৪৪ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে রিজার্ভ কমে এখন ২৩ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। ২০২১ সালের আগস্টে যেখানে রিজার্ভ উঠেছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।

ওবায়দুল্লাহ রনি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.