বিএনপি না এলে জাপার লক্ষ্য আসন বাড়ানো

0
124
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এমপিদের যৌথ সভায় বক্তব্য রাখছেন জি এম কাদের

আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান এখনই খোলাসা করবে না সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাগিদে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে বাঁক নেয়, তা দেখে সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। বিদেশি তৎপরতা উপেক্ষা করে সরকার যদি বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনে যায়, তাহলে আসন বাড়ানোই হবে জাপার লক্ষ্য।

বৃহস্পতিবার বনানী কার্যালয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এমপিদের যৌথ সভায় এসব মত উঠে এসেছে।

দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে– জাপা যেভাবে আছে, নির্বাচনের তপশিল পর্যন্ত সেভাবেই থাকবে। বক্তৃতা-বিবৃতিতে সরকারের সমালোচনা করলেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না। আলোচনায় থাকতে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মিসভা করবে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে যৌথ সভা থেকে জি এম কাদেরকে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

৫১ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ৩৮ এমপি অংশ নেন এ সভায়। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং তাঁর ছেলে রংপুর-৩ আসনের এমপি রাহগীর আল মাহি এরশাদ সাদকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সভায় অংশ নেননি তারা। বাকি ১১ জন অসুস্থতা, ব্যস্ততা এবং বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি বলে জাপা নেতারা জানিয়েছেন। সভায় ৩৫ জন বক্তৃতা করেন।

সভা সূত্র জানিয়েছে, তাদের সবাই এক বাক্যে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে– তা নির্ধারণের পরিবেশ ও সময় হয়নি।

দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচন অংশ নেবে কিনা– এ সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। ভোটের এখনও তিন মাস বাকি। জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। নির্বাচনে অংশ নিলে কারও সঙ্গে জোট হবে কিনা– এ সিদ্ধান্তও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর নেওয়া হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং জোটের বিষয়ে যে কেনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার একক ক্ষমতা দলের চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে।

ভারত সফর শেষে গত ২৩ আগস্ট দেশে ফেরার পর থেকে অনেকটাই নীরব জি এম কাদের। আগের মতো সরকারের কড়া সমালোচনা করছেন না। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে রয়েছে। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগও শরিকদের নিয়ে মাঠে রয়েছে।

নির্বাচনের আগে আলোচনায় থাকতে জাপাও রাস্তায় নামতে চেয়েছিল। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশাসনসহ ১০ দফা দাবিতে পথসভা, লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছিল দলটির গত ৫ আগস্টের যৌথ সভায়। সরকার ক্ষুব্ধ হতে পারে– এ শঙ্কায় জাপা রাজপথের কর্মসূচির বদলে বিভাগীয় কর্মিসভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সভায় বলেছেন, আওয়ামী লীগের অবস্থান এখনও সুদৃঢ়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে সরকার অনড় রয়েছে। বিএনপির আন্দোলন সরকারকে টলাতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাগিদ দিলেও বড় ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে জাতীয় পার্টির বিকল্প চিন্তা করার সুযোগ নেই। রাজনীতিতে টিকে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা উচিত। নইলে আগামী সংসদে জায়গা হারাতে হবে বলে জাপার একাধিক এমপি সভায় জানান।

এমপি নন এমন এক প্রেসিডিয়াম সদস্য সভায় বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিহীন নির্বাচনে জাপার সুযোগ ছিল ৭০ থেকে ৮০টি আসন পাওয়ার। কিন্তু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে মাত্র ৩৪টি আসন পাওয়া গিয়েছিল। আরও কয়েকটি আসন আওয়ামী লীগ ছাড়লেও সেখানে দলটির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে যাওয়ায় জাপা জিততে পারেনি। আগামী নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে ২০১৪ সালের মতো ভুল করা যাবে না। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ২৬ আসন ছেড়েছিল। বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাপার সুযোগ রয়েছে আসন বাড়িয়ে নেওয়ার। এ সুযোগ কাজে লাগানো উচিত।

এ সময় কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য অভিযোগ করেন, জ্যেষ্ঠ নেতারা নিজের আসন পেলে বাকিদের কথা ভাবেন না। নিজে এমপি হতে পারলেই সন্তুষ্ট থাকেন। মুজিবুল হক চুন্নু সভায় বলেন, জাপার লক্ষ্য আসন বাড়ানো। আগামী নির্বাচনে আসন বাড়বে।

রওশন এরশাদের অনুসারীদের নিয়েও কথা হয় সভায়। এতে জি এম কাদের উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাদের নিয়ে এত ভাবনার প্রয়োজন নেই।’ সভায় উপস্থিত সব নেতা জি এম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থাকার অঙ্গীকার করেন।

সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আরও কথা বলেন কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কাশেম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপুসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।

রাজীব আহাম্মদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.