বাপ-বেটার বিশ্বকাপ গল্প

0
93
বাবা টিম ডি লিডের (ডানে) পরে দেশের জার্সিতে বিশ্বমঞ্চে বাস ডি লিড।

অনেকটা চমক জাগিয়েই ওয়ানডে বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। বাছাই পর্বে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের মতো দলের বাধা পার করে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে। ফলে শক্তির বিচারে এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে দুর্বল দল হলেও তারাও অঘটন ঘটাতে পারে। আজ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান পরীক্ষায় নামবে ডাচরা।

এই ম্যাচের আগে আলোচনায় নেদারল্যান্ডসের প্রতিশ্রুতিশীল অলরাউন্ডার বাস ডি লিড। বাছাই পর্বে তাঁর নৈপুণ্যেই বিশ্বকাপে এসেছে ডাচরা। ব্যাট হাতে যেমন বল হাতেও দলের নির্ভরযোগ্য একজন। বিশ্বকাপেও দলটির তুরুপের তাস ডি লিড।

ডাচ এই অলরাউন্ডারের প্রসঙ্গ এলেই মনে পড়ে তাঁর বাবা টিম ডি লিডের কথা। ১৯৯৬ সালে এশিয়া মহাদেশে এসেছিলেন নেদারল্যান্ডসের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে। ২৭ বছর পর আবারও তিনি ফিরবেন ছেলে বাস ডি লিডের খেলা দেখতে। সেবার ভারতের সঙ্গে বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। এবার এককভাবেই বিশ্বকাপের আয়োজক ভারত।

ডাচদের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপের দল ছিল একেবারেই আনকোরা। সেই বিশ্বকাপের স্মৃতিচারণ করে বাসের বাবা টিম জানান, ‘ভিন্ন এক যুগ ছিল তখন, দলের সঙ্গে কোনো চুক্তি ছিল না, তবে সুখ আর আনন্দের সীমা ছিল না আমাদের।’

আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে বাস ডি লিড নামতেই গড়বেন অনন্য এক রেকর্ড। ডন-ডেরেক প্রিঙ্গল, ল্যান্স-ক্রিস কেয়ার্নস, ক্রিস-স্টুয়ার্ট ব্রড, মিচেল-শন মার্শ, রড-টম লাথাম ও কেভিন-স্যাম কারেনের পর সপ্তম পিতা-পুত্র জুটি হবে টিম-বাস ডি লিড।

পিতা-পুত্র জুটির এই ক্লাবে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা বাস খুবই রোমাঞ্চিত। এটাকে বিশেষ কিছু বললেও ২৩ বছর বয়সী ডাচ অলরাউন্ডার বলেন, ‘আমি কখনোই আমার বাবা যা করতেন, তা হুবহু করার জন্য প্রস্তুত হইনি। কিন্তু বিশ্বকাপে আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার বাবাও দেশের হয়ে খেলেছেন, তাঁর সময়ের গল্প শোনা আমাকে রোমাঞ্চিত করে তোলে।’

নেদারল্যান্ডসের হয়ে ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন টিম। ডাচদের হয়ে তিনি শেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০০৭ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। এর মাঝে ২০০৩ বিশ্বকাপে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেন তিনি। টিম ডি লিডের ওই গল্প অনেকবারই শুনেছেন তাঁর ছেলে বাস। সেই বিশ্বকাপে ফেভারিট ছিল ভারত। তাদের দলে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দর শেবাগদের মতো বাঘা বাঘা সব ক্রিকেটার। তাদের ছাপিয়ে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন ‘পুঁচকে’ নেদারল্যান্ডসের অখ্যাত এক ক্রিকেটার টিম ডি লিড। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ৯.৫ ওভারে ৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন এই পেস অলরাউন্ডার। যদিও ভারতের কাছে ৬৮ রানে হেরেছিল ডাচরা।

সেই ম্যাচের স্মৃতি হাতড়ে টিম ডি লিড বলেন, ‘ওই ম্যাচে আম্পায়ার পিটার উইলি আমাকে স্মারক হিসেবে একটি বল দিয়েছিলেন। আমি সেটাতে শচীনের স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিলাম, নিতে পারিনি। কিন্তু ২০০৪ সালে টেন্ডুলকার যখন কনুইয়ের চিকিৎসার জন্য নেদারল্যান্ডসে আসেন, তখন আমি তাঁর থেকে স্বাক্ষর নিয়েছিলাম। শচীন অনেক বড় মাপের খেলোয়াড়, আমার কথা তখন মনে রেখেছিলেন।’

বর্তমানে আধা অবসর জীবন কাটাচ্ছেন টিম। তাঁর সময় কাটে কোচিং ও পরামর্শক হিসেবে, একটি খেলাধুলার দোকানও পরিচালনা করেন তিনি। নিজের ছেলে বাস ডি লিডকেও মাঝে মাঝে ক্রিকেটীয় টিপস দেন তিনি। ২০২২ এর শুরুতে নেদারল্যান্ডস যখন নিউজিল্যান্ডে যায়, তখন ইশ সোধিকে খেলতে পারছিলেন না বাস। তখন বাসকে কিছু ব্যাটিং টিপস দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। যেটি কাজেও লেগেছে ডাচ অলরাউন্ডারের। তবে ক্রিকেট নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে বেশি কথাও হয় না বলে জানান টিম।

দুই ছেলে ও চার কন্যার পরিবার ডি লিডের, ছয় সন্তানের একজন বাস। ডি লিড পরিবারের বাকিরাও বাসের অগ্রগতির খোঁজ রাখেন। তাঁর বাবা টিম জানান, বাসের খোঁজখবর রাখলেও পুরো ম্যাচ অনুসরণ করেন না তারা। যখনই সে ভালো করে, তখনই শুধু আমরা যাই। আমরা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে জানি। আমাদের বাড়িতে এখনও বাচ্চা, সে এখনও বোকা বোকা কাজ করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.