বরিশালে মেয়রের ছবি নামানোর অজুহাতে আওয়ামী লীগ নেতাকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা, ভিডিও ভাইরাল

0
95
বরিশাল জেলার মানচিত্র

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ছবি নামিয়ে ফেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতা হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ওই নেতাকে মারধর করে জুতার মালা পরানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

হেনস্তার শিকার ব্যক্তির নাম মনিরুজ্জামান খান ওরফে বাচ্চু বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বরিশাল নগরের বান্দ রোডে সোনার বাংলার মটরস নামে তাঁর একটি পুরোনো মোটরসাইকেল বিক্রির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাঁকে হেনস্তাকারী ব্যক্তি একই এলাকার নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দার। তাঁর নেতৃত্বে ২২ আগস্ট এ ঘটনা ঘটে বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ২ সেকেন্ড ও ১৭ সেকেন্ডের ২টি ভিডিওতে দেখা যায়, দোকান থেকে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছবি কেন নামিয়ে ফেলা হয়েছে, এ জন্য মনিরুজ্জামানের কাছে কৈফিয়ত চাচ্ছেন কয়েকজন।

মনিরুজ্জামান খান গতকাল সোমবার রাতে বলেন, তিনি এ ঘটনায় ২২ আগস্ট কোতোয়ালি মডেল থানায় চাঁদাবাজি, অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ২৬ আগস্ট পুলিশ সেটি চুরির মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে। পরে তিনি গত রোববার বরিশাল বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন, এখনো বিচারক কোনো আদেশ দেননি।

ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, বিচারক মামলাটি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

মনিরুজ্জামান খান বলেন, গত সিটি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এরপর নাজমুল হাসান তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এসে শাসিয়ে যান। এরপর নানাভাবে তিনি হুমকি পাচ্ছিলেন। ২২ আগস্ট তাঁকে জিম্মি করে হেনস্তা করা হয় এবং সাদিক আবদুল্লাহর ছবি নামিয়ে ফেলার অভিযোগ এনে তাঁকে জুতার মালা পরিয়ে ভিডিও করা হয়। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, ২২ আগস্ট ফোন করে তাঁকে নগরের কালুশাহ সড়কে শহীদ আবদুর রহিম স্মৃতি পাঠাগার ও ক্লাবে ডেকে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে দোতলার পশ্চিম পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যান নাজমুল হাসান। বেলা তিনটার দিকে সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কক্ষটি আটকে সেখানে থাকা তাঁর কয়েকজন সমর্থক তাঁকে (মনিরুজ্জামান) মারধর শুরু করেন। এরপর দফায় দফায় মারধর করা হয়। মারধরকারী ব্যক্তিরা তাঁকে বলতে বলেন যে তিনি (মনিরুজ্জামান) তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ছবি নামিয়েছেন।

মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ওরা যতবার এই কথা বলতে বলেছে, ততবার আমি বলেছি যে সাদিক আবদুল্লাহর ছবি আমার অফিস থেকে নামাইনি। এতে মারধরের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে বাধ্য হয়ে ওদের শেখানো কথা বলি যে সাদিক আবদুল্লাহর ছবি নামিয়েছি এবং এটা আমার অন্যায় হয়েছে। এরপর ওরা আমাকে ছেড়ে দিলে আমি চলে আসছিলাম। এরপর একজন বলে, “ওকে এভাবে ছেড়ে দিলে মামলা করবে। তার চেয়ে ওকে জুতার মালা গলায় পরিয়ে ভিডিও করে রাখলে সারা জীবন আমাদের সম্মানের ভয়ে টাকা দেবে, মামলা করবে না।” এরপর ওরা আমাকে আবার ধরে ভেতরে নিয়ে যায় এবং জুতার মালা গলায় পরিয়ে ভিডিও ধারণ করে। পরদিন প্রদীপ নামের একটি আইডি থেকে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দারের মুঠোফোনে গতকাল ও আজ বেশ কয়েকবার কল দিলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তিনি অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দুটি ভিডিও এডিট করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মনিরুজ্জামানের গলায় জুতার মালা পরানোর যে ভিডিও, এর সঙ্গে আগের ভিডিওর সম্পৃক্ততা নেই। ওখানে সাদিক আবদুল্লাহর নাম বলা আমার উচিত হয়নি। এ জন্য সাদিক ভাইও আমার ওপরে খুব ক্ষিপ্ত হয়েছেন। এটা আমি ভুল করেছি।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন আজ দুপুরে বলেন, ওই ব্যক্তি তাঁকে আটকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা, পকেটে থাকা অর্থ নিয়ে যাওয়াসহ লিখিত অভিযোগে যেসব ঘটনা উল্লেখ করেছেন, সব অভিযোগই মামলা হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। চুরির মামলা নেওয়া হয়েছে বলে যে তথ্য দিয়েছেন, তা সত্য নয়। মামলার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.