বরাদ্দ পেয়েও ছাত্রলীগ নেতাদের বাধায় সিটে উঠতে পারেননি প্রতিবন্ধী ছাত্র, থাকেন মেঝেতে

0
104
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাদিম আলী

নাদিম আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চার বছর বয়সে তাঁর বাঁ পা অচল হয়ে যায়। এর পর থেকে ডান পায়ে ভর করেই চলাচল করতে হয় তাঁকে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। অনেক প্রতিকূলতা পার হয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর অনেক কষ্টে আবাসিক হলের একটি কক্ষে সিট পেলেও এখনো মেঝেতেই অবস্থান করতে হচ্ছে তাঁকে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ছাত্রকে শাসিয়ে কক্ষ দখলের চেষ্টা ছাত্রলীগের

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নাদিম আলী বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিডিএফের (ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট) সুপারিশের মাধ্যমে গত বছরের ২৬ নভেম্বর প্রাধ্যক্ষের কাছে আবেদন করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন ২৭ নভেম্বর হলের তৃতীয় ব্লকের নিচতলার ১৫২ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু হল ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলী তাঁর অনুসারী নাঈম নামের এক শিক্ষার্থীকে ওই সিটে তোলেন। এতে দুই মাস ওই কক্ষে থাকতে পারিনি আমি। পরে একদিন হল প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টি জানালে তিনি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।’

এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলী বলেন, ‘আমাদের কমিটিরই এক ছোট ভাই ওই কক্ষে ছিল। প্রাধ্যক্ষ স্যার নাদিম আলীকে সেখানে বরাদ্দ দেন। পরে আমি প্রাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে অন্য কক্ষে বরাদ্দ দিয়ে তাঁর (নাদিম) সিট পরিবর্তন করে দিই।’

ভুক্তভোগী নাদিম আলীর ভাষ্য, ‘গত ২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার ২৩৪ নম্বর কক্ষে বরাদ্দ দেন প্রাধ্যক্ষ। কিন্তু ওই কক্ষে আগে থেকেই দুই আবাসিক শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২৫৫ নম্বর কক্ষে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই সিটে বর্তমানে ফ্লোরিং করে থাকছি। কিন্তু ওই সিটে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কাজী আমিনুল হকের (লিংকন) অনুসারী মেহেদী হাসান। তবে তিনি আবাসিক ছাত্র নন।’

অভিযোগের বিষয়ে মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমি এক বছর ধরে ওই সিটে অবস্থান করছি। প্রাধ্যক্ষ আমাকে সিট বরাদ্দ দেবেন বলে জানান, কিন্তু এখনো দেননি। হলে থাকার আবাসিক সুবিধা আমার নেই।’

এরপর আবার নাদিমের সিট পরিবর্তন করেন হল প্রাধ্যক্ষ। ৬ মার্চ ২২৭ নম্বর কক্ষে নাদিম আলীকে আবারও সিট বরাদ্দ দেন প্রাধ্যক্ষ। কিন্তু ওই সিটে উঠতে নিষেধ করেন ১০৫ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী নুর আলী। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলীর অনুসারী বলে জানান হলের সুপারভাইজার মামুনুর রহমান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে নির্যাতন

অভিযোগের বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলী বলেন, ‘ওই কক্ষে আমার এক ছোট ভাইয়ের ওঠার কথা ছিল। কিন্তু হল প্রাধ্যক্ষ ইতিমধ্যে দুজনকে বরাদ্দ দিয়েছেন। নুর আলীর হুমকির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

এ বিষয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সুজন সেন বলেন, ‘ওই ছেলেকে (নাদিম আলী) আমি সিট দিয়েছি। এমন তো না যে সিট দেইনি। বিভিন্ন কারণে তাঁর সিট পরিবর্তন করা হয়েছিল। আমি কালকে হলে গিয়ে তাঁর বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.