বগুড়ায় ডাকঘরে কর্মচারীকে খুন করে টাকা লুটের পাঁচ দিনেও জড়িতরা অধরা

0
110
বগুড়া প্রধান ডাকঘরের ফটক

বগুড়ার প্রধান ডাকঘরের ভল্ট ভেঙে আট লাখ টাকা লুট এবং অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে পাঁচ দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ডাকাতির ঘটনায় কতজন অংশ নিয়েছিল, সেটাও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত সোমবার থানায় মামলা হলেও আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। পুলিশ বলছে, অপরাধীদের শনাক্ত করতে ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।

এদিকে ডাকাতির ঘটনায় ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল হান্নানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডাক বিভাগের উত্তরাঞ্চলের পোস্টমাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলামের নির্দেশে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে কমিটিকে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। তদন্ত কমিটির প্রধান আবদুল হান্নান বলেন, কমিটিকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

এর আগে ২৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে একদল ডাকাত বগুড়ার সাতমাথায় প্রধান ডাকঘরে প্রবেশ করে অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্যকে হত্যা করে। এ সময় ডাকাত দল ভল্ট ভেঙে আট লাখ টাকা লুট করে। ট্রেজারির ভল্টে ৪৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা রাখা ছিল। সেই ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনার পরদিন সোমবার রাতে প্রধান ডাকঘরের পোস্ট অফিস পরিদর্শক (শহর) মহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে সাতজনকে আসামি করে হত্যা ও ডাকাতির মামলা করেন। নিহত প্রশান্ত কুমারের বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া হিন্দুপাড়ায়।

বগুড়ায় ডাকঘরে ঢুকে কর্মচারীকে হত্যা, ভল্ট ভাঙার চেষ্টা

মামলার অগ্রগতি সম্পর্ক জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বগুড়া সদর ফাঁড়ির পরিদর্শক শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলমান। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, প্রধান ডাকঘরে ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অপরাধীদের শনাক্ত করতে ও ডাকাতির ঘটনায় ঠিক কতজন অংশ নিয়েছিল, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাতমাথার আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে ফুটেজ দেখে এখনো অপরাধীর সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, অপরাধীদের শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে ভল্টের বাইরেও আলমারিতে বিপুল টাকা ছিল। ভল্টের বাইরে কেন টাকা রাখা ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আগেও ডাকাতি হয়েছে

বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে এর আগেও একাধিকবার ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনার পরও নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশ ও ডাক বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে ডাকাতি ও খুনের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ডাকাত দল ভল্ট ভেঙে লাখ টাকা লুট করে। এর বেশ কয়েক বছর পর ২০০৫ সালে সর্বহারা পরিচয়ে গুলি ছুড়ে ডাকঘর থেকে চার লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটলেও প্রধান ডাকঘরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়নি বলে অভিযোগ আছে। ডাকঘরের পুরো চত্বরে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। সীমানাপ্রাচীরও পর্যাপ্ত উঁচু নয়। প্রাচীরের ওপর কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও সেটা টপকে ভেতরে ঢোকা অনেকটা সহজ।

প্রধান ডাকঘর চত্বরের সীমানাপ্রাচীরও পর্যাপ্ত উঁচু নয়। ছবিটি গত সোমবার তোলা
প্রধান ডাকঘর চত্বরের সীমানাপ্রাচীরও পর্যাপ্ত উঁচু নয়। ছবিটি গত সোমবার তোলাছবি: সোয়েল রানা

ডাকঘরের উত্তর পাশের প্রাচীরঘেঁষেই কয়েকটি আসবাবের দোকান আছে। এবারের ঘটনায় ডাকাত দল কাঠের আসবাবের ওপর দিয়ে প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করছেন ডাকঘরের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ডাক বিভাগের অধীন সেখানে ডাক ব্যাংকিং ও আমানত কার্যক্রম চালু থাকলেও ডাকঘরের অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী কোনো নিরাপত্তায় নেই।

জানতে চাইলে বগুড়ার ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, ডাকঘরে রাত্রীকালীন নিরাপত্তার জন্য নৈশপ্রহরী থাকলেও ঈদের ছুটির কারণে অফিস সহায়ক ও কর্মচারীদের পালা করে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য রাত্রীকালীন নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তবে ডাকঘরে অর্থনৈতিক লেনদেন কার্যক্রম থাকলেও অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী নেই। অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের।

বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাবু কুমার সাহা বলেন, নথি অনুযায়ী আশির দশকের শেষ দিকে এবং চলতি শতকের শুরুর দিকে এই ডাকঘরে ডাকাতি, হত্যা ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। নতুন করে ডাকাতি ও হত্যা মামলার তদন্তের স্বার্থে পুরোনো নথি খুঁজে বের করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.