প্রস্তুত থাকুন, আপনাকে যেকোনো উপায়ে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানো হবে: কাকে বললেন চঞ্চল চৌধুরী

0
101
চঞ্চল চৌধুরী।

আধুনিকতা আর সম–অধিকারের ঝান্ডা তুলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার করছেন না? আপনার অরক্ষিত এই কার্যকলাপে সমাজ বা নতুন প্রজন্ম কতটুকু প্রভাবিত হচ্ছে, সেটুকু ভাবার অবকাশ কি আপনার আছে? আপনি কি সত্যিই সমাজের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করছেন? ছোটবেলায় পড়তাম বিজ্ঞান “আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ? ” বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে।

চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো

চঞ্চল চৌধুরী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঠিক ব্যবহারই হয়তো জাতির জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো রাখেও। কঠিন সত্য এটাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বর্তমানে যতটা না সামাজিক কর্মক্ষেত্র, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ব্যক্তিগত বাণিজ্য ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফেসবুকে “রিল” নামক একটি বিষয় আছে। এখানে অধিকাংশই যে কতটা অশ্লীল, ভাবতেও অবাক লাগে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব অশ্লীলতার বিরুদ্ধাচরণ করি। সেন্সরবিহীন এসব অশ্লীল কার্যকলাপ কে বন্ধ করবে?

এখানে রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা কি আমরা আশা করতে পারি না? সেই সঙ্গে আপনার বা আমার অসচেতনতা অথবা সমর্থনের ভেতর দিয়ে তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে বিতর্কিত কিছু ভাইরাল ব্যক্তি। তিনি যখন আপনার কাছে পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব দাবি করবেন, আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন? পারবেন না…কারণ আপনার বালখিল্য আচরণ, উদাসীনতা আর সস্তা বিনোদনপ্রিয়তায় আপনি সেই সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আপনার অরক্ষিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারই এর জন্য দায়ী।

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী।

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী।

আপনি কি আপনার সন্তানের কথা ভাবেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেন? যদি করেন, তাহলে অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারেও আপনাকেও অনেক দায়িত্বশীল হতে হবে। তথাকথিত কিছু অসৎ রাজনীতিবিদের কারণে যেমন রাজনীতি কলুষিত, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার বা আমার সমর্থনে গজিয়ে ওঠা ভাইরাল ব্যক্তিদের কারণে সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়…দায়ী আপনি বা আমি, দায়ী আমাদের নিম্ন মানসিকতা। আপনি কাকে অনুসরণ করবেন বা সমর্থন দেবেন বা কে হবে এই দেশে আপনার রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আদর্শ, চূড়ান্ত ভাবনার এই সময়টুকুও বোধ করি পেরিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো অবজ্ঞা করার মতো হলেও আমাদের সন্তানেরা ভবিষ্যতে অনুসরণ বা শ্রদ্ধা করার মতো কাউকে পাবে না। পরিচিত হতে হবে আপনার রুচিতে জন্ম দেওয়া কোনো ভাইরাল বিনোদন ব্যক্তির উত্তরসূরি হিসেবে।

চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

কারণ, আপনি বা আমি ঠিক–বেঠিক বা উচিত–অনুচিতের পার্থক্য ভুলে সস্তা বিনোদনপ্রিয় জাতিতে পরিণত হয়ে গেছি। বুঝতে পারছেন কি, সামনে কতটা অন্ধকার? চুপ করে থাকা রাজনীতিক, সংস্কৃতিমান এবং রুচিশীলদেরকে বলছি, প্রস্তুত থাকুন, আপনাকে যেকোনো উপায়ে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানো হবে। তাই এখনো সময় আছে, মুখ খুলুন, প্রতিবাদ করুন। এই ব্যর্থতা প্রথমত রাষ্ট্রের, দ্বিতীয়ত তথাকথিত সংস্কৃতিকর্মীদের; যাঁদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল জাতিকে সঠিক পথ দেখানো, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.