প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জিতে গফের প্রশ্ন, ‘এটা কি আসলেই সত্যি’

0
99
ইউএস ওপেনের শিরোপা হাতে কোকো গফছবি: এএফপি

ঘরের দর্শকের সামনে গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল বলেই হয়তো শুরুতে স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন কোকো গফ। তাঁকে একটু নড়বড়ে পেয়ে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন আরিনা সাবালেঙ্কাও। পাওয়ার টেনিস দিয়েই গফকে জব্দ করার কৌশলেই শুরুটা করেছিলেন সাবালেঙ্কা। সেই আগ্রাসী রূপ ধরে রেখেই প্রথম সেটে রীতিমতো উড়িয়েও দিলেন গফকে। কিন্তু লড়াকু গফ ভড়কে যাননি। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে পরের দুই সেটে ফিরলেন দাপটের সঙ্গে। পাল্টা আঘাতে উড়িয়ে দিলেন দ্বিতীয় বাছাই বেলারুশিয়ান প্রতিপক্ষ সাবালেঙ্কাকে। ২-১ সেটে তাঁকে হারিয়ে জিতে নিয়েছেন নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপাও।

নারীদের টেনিসের গল্পটা বেশির ভাগ সময়ই ধূমকেতুর মতো আবির্ভাবের পর নিমেষেই হারিয়ে যাওয়ার। প্রায় প্রতি মৌসুমেই নতুন তারকার জন্ম হয়, যাঁদের বেশির ভাগই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন না। কিন্তু গফের গল্পটা ছিল উল্টো। ২০১৯ সালে ১৫ বছর বয়স থেকেই গ্র্যান্ড স্লামে নিয়মিত মুখ গফ।

কিন্তু সর্বোচ্চ অর্জন ছিল গত বছরের ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে খেলা। সেবার ফাইনাল থেকে হতাশা নিয়ে ফিরলেও এবার আর নিরাশ হতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েকে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই জিতে নিয়েছেন নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে সাবালেঙ্কার বিপক্ষে গফের জয় ২-৬, ৬-৩ ও ৬-৩ গেমে।

নিউইয়র্কের ফাইনালে আন্ডারডগ হিসেবে শুরু করা গফ যেন নিজের এ জয়কে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি এ মুহূর্তে স্তব্ধ। আমার মনে হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা আমাকে কষ্টের ভেতর দিয়ে এটি দিয়েছেন। হয়তো অর্জনটাকে আরও মধুর করার জন্য। আমি কৃতজ্ঞ। এই অনুভূতি ব্যক্ত করার কোনো ভাষা নেই।’

গফের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না
গফের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না, ছবি: এএফপি

অন্যদিকে নিজের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লামের খোঁজে আসা সাবালেঙ্কার একমাত্র সান্ত্বনা তিনি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠতে যাচ্ছেন। এই প্রাপ্তিটুকু বাদ দিলে সাবালেঙ্কার বাকি গল্পটা হতাশারই। দারুণভাবে শুরু করেও ছন্দ হারিয়ে ফেলেন, যা শেষ পর্যন্ত শিরোপাবঞ্চিত করেছে তাঁকে। অন্যদিকে ইউএস ওপেন জিতে র‍্যাঙ্কিংয়ে ক্যারিয়ারে সেরা তিন নম্বরে চলে আসবেন গফও।

এদিন সাবালেঙ্কার বিপক্ষে ব্যাকহ্যান্ড শটে চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট নিশ্চিত করেই কোর্টে শুয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলেন গফ। নিজের কীর্তিটা যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এ সময় স্টেডিয়ামে উপস্থিত ২৪ হাজার দর্শকও গফের সঙ্গে উদ্‌যাপন করেছেন, তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন। জয়ের পর দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দিয়ে গফ গ্যালারিতে গিয়ে উদ্‌যাপন করেছেন তাঁর মা–বাবার সঙ্গে।

পরিবারের সঙ্গে উদ্‌যাপনের অনুভূতি নিয়ে গফ বলেছেন, ‘আমি যখন আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি তাঁর মুখ দেখিনি। কারণ, তিনি আমাকে জড়িয়ে ছিলেন। তবে আমি তাঁর কান্নার শব্দ শুনতে পেয়েছি। আমি কখনো মানুষটিকে কাঁদতে দেখিনি। আর আমার মা, আমি জানতাম আমি হারি কিংবা জিতি তিনি কাঁদবেনই। আমি সারাক্ষণই নিজেকে বলছিলাম, হে সৃষ্টিকর্তা এটা কি আসলেই সত্যি?’

গতকাল পর্যন্ত যা স্বপ্ন ছিল, তা এখন গফের জন্য বাস্তবতা। সেরেনা উইলিয়ামসের পর প্রথম মার্কিন টিনএজার হিসেবে ইউএস ওপেন জয়ের কীর্তিও এখন গফের নামের পাশে। তবে এটা তো মাত্র শুরু। গফের পাড়ি দেওয়ার আছে লম্বা পথ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.