পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে ১৫৩ কোটি টাকা

0
140
ই-কমার্স

ব্যাপক ছাড়ে পণ্য পাওয়ার ফাঁদে পড়ে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। কয়েক হাজার কোটি টাকা মেরে লাপাত্তা অনেক ই-কমার্সের মালিক। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক এখন জেলে। এ অবস্থায় গত দুই বছরেও পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থই এখনও পরিশোধ হয়নি। এর বাইরে ১১টি ই-কমার্সের ব্যাংক হিসাবে ১৩৬ কোটি টাকা থাকলেও তা ফেরত দেওয়ার তেমন উদ্যোগ নেই। ফলে জালিয়াতি করে যারা পালিয়েছেন, তাদের সম্পদ বিক্রি বা অন্য উপায়ে অর্থ উদ্ধারে আদৌ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মোটা দাগে সাতটি পেমেন্ট গেটওয়েতে ২০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আটকে ছিল ৫৪৬ কোটি টাকা। এ অর্থের পাওনাদার ছিলেন ৫১ হাজার ৮৪১ জন। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গত দুই বছরে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ৩৮১ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছেন গ্রাহক। ৫৭ হাজার ১৩৮টি লেনদেনর বিপরীতে এ অর্থ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে চার্জব্যাক বাবদ গেছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও ১৫৩ কোটি টাকা আটকে আছে বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে। তবে গ্রাহকের তালিকা না পাওয়ায় তা ফেরত দিতে পারছে না মন্ত্রণালয়। মূলত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে গা-ঢাকা, মালিক জেলে আটক কিংবা দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ায় তালিকা দেওয়ার মতো কেউ নেই। পণ্যের অর্ডার দিয়ে পেমেন্ট গেটওয়ের হিসাবে স্থানান্তরের আগেই এ অর্থ আটকে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাইরে বিভিন্ন ই-কমার্সের ব্যাংক হিসাবে রয়েছে মাত্র ১৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আলোচিত ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের ছয়টি অ্যাকাউন্টে রয়েছে মাত্র ৪৭ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, শুধু পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রেও নানা জটিলতার কারণে পুরো অর্থ এখনও ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে অনেক কোম্পানির মালিক লাপাত্তা। ফলে তাদের গ্রাহকদের কোনো তালিকা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার গ্রাহক দাবি করে কেউ এলেই তো টাকা দেওয়া যায় না। যে কারণে আটকে থাকা পুরো অর্থ এখনও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থের বাইরে যাদের অ্যাকাউন্টে টাকা রয়েছে, আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলে তা পরিশোধ করা হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, বর্তমানে পাঁচটি পেমেন্ট গেটওয়েতে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের টাকা আটকে আছে। এর মধ্যে ফস্টার করপোরেশনের কাছে রয়েছে ৭৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এই অর্থের সবই অস্বাভাবিক ছাড়ে বাইক বিক্রির কারণে আলোচনায় আসা কিউকমের। এ ছাড়া সফটওয়্যার শপে ৫২ কোটি ৫৯ লাখ, এমএফএসের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ, সূর্যমুখী লিমিটেডে ১৪ কোটি ৭ লাখ এবং আমারপেতে ৩৮ হাজার ৪৪৬ টাকা আটকে আছে। পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে উপযুক্ত প্রমাণসহ গ্রাহকের তালিকা পেলেই এসব অর্থ ছাড়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো নীতিমালা না থাকার সুযোগে ই-কমার্সের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মালিকরা। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক বা পরিবারের সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা ফেরতের দাবি থাকলেও তা নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠান কত কোটি টাকা হাতিয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থার কাছে নেই। যদিও ওই সময়ে এসব তথ্য বের করতে প্রতিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বহিঃনিরীক্ষক দিয়ে অডিট করানোর আলোচনা উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

সাধারণভাবে পণ্য হাতে পাওয়ার পর টাকা পরিশোধের কথা। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসার আগ পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ছাড়ের লোভ দেখিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলেছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ধেক বা তারও কম দামে প্রতিনিয়ত কিছু মানুষকে পণ্য দেওয়ার অফার করত। যে কারণে নতুন নতুন অনেকে সম্পৃক্ত হন এতে। এমনকি ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার বা অন্য জায়গা থেকে জমানো টাকা তুলে বিনিয়োগ করেন অনেকে।

ওবায়দুল্লাহ রনি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.