পিটিআইয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সাড়ে ৫ মাস ধরে বন্ধ

0
101
প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই)

প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) প্রতিবছরের জানুয়ারিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়নি।

পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ‘বিতর্কিত’ সিদ্ধান্তের জেরে সৃষ্ট জটিলতায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে।

সাড়ে পাঁচ মাস ধরে প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পিছিয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে পিটিআইয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশিক্ষণের কাজ না করেও বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।

এখন তাড়াহুড়া করে আগামী ১ জুলাই দেশের ৬৭টি পিটিআইয়ের মধ্যে ১৫টিতে শিক্ষকদের জন্য সংকুচিত মেয়াদের প্রশিক্ষণ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। ১৮ মাসের বদলে এই কোর্স হবে ১০ মাসের। প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ৩০ জুন বিকেলে প্রশিক্ষণার্থীদের (শিক্ষক) সংশ্লিষ্ট পিটিআইয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। তবে সেদিন পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি রয়েছে।

পূর্বঘোষিত সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৮ থেকে ৩০ জুন ঈদুল আজহার ছুটি রয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি ২৭ জুন থেকে এই ছুটি শুরুর সুপারিশ করেছে। আর ৩০ জুনের (শুক্রবার) পরদিন ১ জুলাই (শনিবার) সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি।

একাধিক সূত্র বলছে, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ পিটিআইগুলোয় ১৮ মাসের ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্সকে সংকুচিত করে ১০ মাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই মূলত এ নিয়ে সংকট শুরু হয়, যা এখনো চলছে।

যেভাবে সংকটের সূত্রপাত

বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ আছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৭১টি। এখন কর্মরত আছেন ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৫ জন শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ৩৭ হাজার শিক্ষকও আছেন। তাঁরাসহ প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক বর্তমানে প্রশিক্ষণবিহীন বলে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সূত্রগুলো জানিয়েছে।

দেশের ৬৭টি পিটিআইয়ের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এই প্রশিক্ষণ সব শিক্ষকের জন্যই বাধ্যতামূলক।

একসময় এই প্রশিক্ষণ কোর্স ছিল এক বছর মেয়াদি। তখন প্রশিক্ষণ কোর্সটির নাম ছিল সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিইনএড)। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে এই কোর্সের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দেড় বছর (১৮ মাস) করার কথা বলা হয়।

পরে শিক্ষানীতির সুপারিশ ও শিক্ষাক্রম–বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ২০১২ সালে প্রথমে ৭টি বিভাগীয় শহরে অবস্থিত পিটিআইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ১৮ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। গুরুত্ব বিবেচনায় কোর্সের নাম দেওয়া হয় ডিপিএড।

২০১৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের সব পিটিআইয়ে ডিপিএড কোর্স শুরু হয়। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে আসছে ময়মনসিংহে অবস্থিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)।

পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে উল্টো পথে শিক্ষা প্রশাসন

সূত্র জানায়, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে পিটিআইয়ের মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সের সময় সংকুচিত করার চেষ্টা শুরু করেন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কিছু কর্মকর্তা। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের নভেম্বরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রম স্টিয়ারিং কমিটির’ এক সভায় প্রশিক্ষণের মেয়াদ ১৮ মাস থেকে কমিয়ে ১০ মাস করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সংকুচিত মেয়াদের কোর্সের নতুন নাম দেয় মৌলিক প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ (বিপিটিটি)।

১০ মাস মেয়াদের কোর্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন পিটিআইয়ের একজন ইনস্ট্রাক্টর। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপর ছয় মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট।

পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চেম্বার আদালতে যায়। হাইকোর্টের আদেশ দুই মাসের (আট সপ্তাহ) জন্য স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এই সময় শেষ হবে।

সংকুচিত কোর্স শুরুর তোড়জোড়

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ এখন ১৫টি পিটিআইয়ে সংকুচিত প্রশিক্ষণ কোর্স শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য চলছে তোড়জোড়। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের এই তৎপরতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

মাধ্যমিকে আলাদা শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই চলছে প্রাথমিক শিক্ষা, সমস্যা নানামুখী

১৫টি পিটিআইয়ে ১০ মাস মেয়াদি যে কোর্সটি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ চালু করতে যাচ্ছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে পরিমার্জিত ডিপিএড (মৌলিক) প্রশিক্ষণ কোর্স।

পিটিআই সূত্রগুলো বলছে, মূলত কিছুটা ‘এদিক-সেদিক’ করেই প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ তাদের নেওয়া আগের সিদ্ধান্তটি যেকোনোভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইছে।

জানতে চাইলে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) মহাপরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, এখন ১৫টি পিটিআইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে সবগুলো পিটিআইয়ে কোর্স শুরু হবে।

৭ জুন নেপ এক আদেশে জানায়, প্রশিক্ষণার্থীদের (শিক্ষক) ভর্তি হওয়া পিটিআইয়ে ছয় মাস প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর নিজ উপজেলার নির্ধারিত বিদ্যালয়ে চার মাসের ইন্টার্নশিপ করতে হবে। পিটিআইয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ আবাসিক। তাই কোনো প্রশিক্ষণার্থী এই সময় পিটিআইয়ের বাইরে অবস্থান করতে পারবেন না।

তবে ১৮ মাসের বদলে ১০ মাসের এই কোর্স কতটা কাজে দেবে, তা নিয়ে পিটিআইয়ের ইনস্ট্রাক্টরদের মধ্যেই প্রশ্ন আছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.