পাহাড়ে এখনো সাড়ে ৩ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে

0
107
বন্যার পানি কমায় দেখা যাচ্ছে ডুবে যাওয়া ঘর। সম্প্রতি বান্দরবানের উজানী পাড়ায়

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হয়ে তিন পার্বত্য জেলায় অতিবৃষ্টি আপাতত বিরতি নিয়েছে। তবে ওই এলাকাগুলোতে প্রবল বৃষ্টির ক্ষতচিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। পাহাড়ি ওই বৃষ্টির কারণে সেখানে যে ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তাতে এখনো সাড়ে তিন লাখ মানুষ ঝুঁকিতে আছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশ কার্যালয় এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে প্রকাশ করা আলাদা দুটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করে ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

১৬ আগস্ট জাতিসংঘ থেকে প্রকাশ করা ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট ২৪ লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছিল। আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১২ লাখ। যার মধ্যে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৬১ জন নারী ও ৪ লাখ ২৭ হাজার হচ্ছে শিশু। ওই তালিকায় ৬৮ হাজার বয়স্ক মানুষও রয়েছেন, যাঁদের বয়স ৬৫–এর বেশি। এ ছাড়া সেখানে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার অন্তঃসত্ত্বা মা ও প্রায় ১৮ হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছেন।

ভারী বৃষ্টির কারণে এত ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণত বাংলা ভাদ্র ও আশ্বিন মাস অর্থাৎ ইংরেজিতে সেপ্টেম্বরে উপকূলে অতি জোয়ারের কারণে বন্যা হয়ে থাকে। ওই এলাকার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষতি হয়। প্রায় প্রতিবছর এটা সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এবার এর আগেই অতিবৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে যতটা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে। ৩১ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের শুরুর সময়টা আবার পূর্ণিমার সময়। ফলে ওই সময়টায় আবারও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জোয়ারের উচ্চতা অতিরিক্ত বেড়ে বন্যা হতে পারে।

জাতিসংঘের নেতৃত্বে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির সমীক্ষার অন্যতম দলনেতা ও কেয়ার বাংলাদেশের মানবিক সাহায্য কর্মসূচির পরিচালক কায়সার রিজভী বলেন, হঠাৎ বন্যায় পাহাড়ি এলাকায় বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে বেশি। ঝুঁকিতে থাকা সাড়ে তিন লাখ মানুষ এখনো অস্থায়ী জায়গায় আছে। তাদের খাদ্য, চিকিৎসা ও পানি–সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘর মেরামতের দরকার আছে।

অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষয়ক্ষতির সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। তাদের হিসাবে পাহাড়ি ঢলে ভৌগোলিকভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বান্দরবান জেলা। সেখানকার ১৮টি ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। জেলাটির নীলগিরি এবং থানচি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড়ধসের কারণে ওই সড়কেও ধস নামে। ফলে বান্দরবানের সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। বান্দরবান শহরের ৮০ শতাংশ এলাকা ১৫ থেকে ২০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। বান্দরবান থেকে রাঙামাটিতে যাওয়ার পথটি ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার পানিতে ডুবে থাকে।

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ত্রাণ এবং নগদ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। দ্রুত এ ব্যাপারে সহায়তা দেওয়া শুরু করব।’

ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। সাধারণত যেখানে আগস্টে সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে ৫৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, সেখানে মাত্র এক সপ্তাহে সেখানে ৫৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শহরের চকবাজার, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ এলাকায় দীর্ঘ সময় ও উচ্চতায় পানি জমে থাকে।

আর্থিকভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার বাসিন্দারা। দেশের অন্যতম পাইকারি ওই বাজারে প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিত্যপণ্যের এসব পাইকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পাশাপাশি তাদের পণ্য নষ্ট হওয়ার কারণেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমে থাকায় শহরের সব নদী ও খাল বর্জ্যে ভরে ওঠে।

জানতে চাইলে ওই ক্ষয়ক্ষতি সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সাজিদ রায়হান বলেন, পাহাড়ের অধিবাসীদের বড় অংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এখনো অনেক দুর্গম এলাকায় সড়ক ঠিক হয়নি। ফলে স্থানীয় লোকজন উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি সড়কগুলো দ্রুত মেরামত করা উচিত।

কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দফা হঠাৎ বন্যা আঘাত হেনেছে। এতে পাহাড়ধস ও পানি জমে থাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ এ কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়েছে জেলার ৩৩ হাজার অধিবাসীকে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওই পর্যটন শহরের ৪৬ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়েছে। ফলে এখনো সেখানে ধসের ঝুঁকি এবং যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

ইফতেখার মাহমুদ

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.