পারফেক্ট জয়ে সলিড পেস, মুগ্ধ তামিম

0
103
বৃহস্পতিবার সিলেটে তৃতীয় ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ।

প্রথম দুই ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিল আয়ারল্যান্ড। দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতেছিলেন। সেটা মাথায় রেখেই হয়তো বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে সিদ্ধান্ত বদলে ব্যাটিংয়ে নামেন আইরিশ অধিনায়ক এন্ডি বালবার্নি।

কাকতালীয় ব্যাপার হলো, সিলেটের যে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পর পর দুই ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন, সেখানেই রেকর্ড গড়লেন পেসাররা। এই প্রথম বাংলাদেশের পেসাররা প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট তুলে নিয়েছেন। তাঁদের দাপটে ১০১ রানে ধসে গেছে আয়ারল্যান্ড। এরপর তামিম ও লিটনের দাপটে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটের জয় পেয়েছেন তাঁরা।

এমন জয়ের পর স্বভাবতই ভীষণ উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে পেসারদের প্রশংসায় তামিম বলেন, ‘অবিশ্বাস্য! যেভাবে আমরা পুরো সিরিজ খেলেছি, সেটা ছিল দুর্দান্ত। পারফেক্ট সিরিজ। প্রথম দুই ম্যাচে আমরা ব্যাট হাতে পারফর্ম করেছি। আর বল হাতে আজ আমরা যা করেছি, অতীতে কখনই তা পারিনি। এখন আমি গৌরবের সঙ্গে বলতে পারি আমাদের একটি সলিড, সলিড, সলিড ফাস্ট বোলিং বিভাগ আছে!’

তিনবার সলিড বলার মাঝেই ফুটে ওঠে তামিমের মুগ্ধতা, উচ্ছ্বাস ও আত্মবিশ্বাস। আসলে এমন ইতিহাস গড়া পারফরম্যান্স করার পর এই উচ্ছ্বাস খুবই স্বাভাবিক। ওয়ানডেতে এর আগে পেসাররা এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৮ উইকেট নিতে পেরেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে পেসারদের এ সাফল্যের পেছনে কঠোর পরিশ্রমের কথাও বলেছেন তামিম, ‘যদি বলি তারা দারুণ বল করেছে, তাহলে সেটা ভুল হবে। মাঠের ভেতরে ও বাইরে তারা যে পরিমাণ পরিশ্রম করে এবং যন্ত্রণা সহ্য করে, এর ফসল হলো এই সাফল্য। তাদের এই সাফল্য মোটেই ফ্লুক কিছু নয়।’

এই পেসাররা তাঁর চিন্তা লাঘব করে দিয়েছেন বলেও জানান তামিম, ‘এমন একটি ফাস্ট বোলিং আক্রমণ থাকলে জীবন ভীষণ সহজ হয়ে যায়। এমন পেস বোলিং ইউনিট নিয়ে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে যে কোনো দলের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব বলেও আমি বিশ্বাস করি। চার পেসারের বোলিং ইউনিট নিয়ে আমি গর্বিত।’

অথচ ঘরের মাঠে বাংলাদেশ পুরোপুরি স্পিনের ওপর নির্ভরশীল। সেখান থেকে এই পরিবর্তন সত্যিই অনেক বড় চমক। ইংলিশ কন্ডিশনে অভ্যস্ত আইরিশদের বিপক্ষে সবুজ ঘাসের উইকেট বানানো সত্যিই ভীষণ সাহসের বিষয়। আগামী বিশ্বকাপ মাথায় রেখেই নাকি এমন উইকেট বানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তামিম। আর সে উইকেটে হাসান, এবাদত, তাসকিনরা ১৪৫ কিমির বেশি গতি তুলেছেন, বাউন্সে নাজেহাল করেছেন, আবার ইয়র্কারে স্টাম্প উড়িয়েছেন। তবে সবচেয়ে অবাক করেছে বাংলাদেশি পেসারদের সুইং। তাদের সুইং দেখে রীতিমতো বোকা বনে গেছেন বালবার্নি-স্টার্লিংরা

বাংলাদেশের এই পেসনির্ভর হওয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের। ‘সাদা বিদ্যুৎ’ নামে খ্যাত কিংবদন্তি এ প্রোটিয়া পেসারের অবদান নিয়ে বলেছেন বৃহস্পতিবার ৫ উইকেট পাওয়া হাসান মাহমুদ, ‘ডোনাল্ডের অধীনে আমাদের ফাস্ট বোলাররা কঠোর পরিশ্রম করছি। প্রতিনিয়ত আমাদের বোলিং উন্নত করার চেষ্টা করছেন তিনি।’

ডোনাল্ডের কাজের প্রক্রিয়া নিয়েও বলেছেন তরুণ এ পেসার, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে তিনি (ডোনাল্ড) আমাদের সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতা ও ধারণা শেয়ার করেন। নিজের বোলিং ক্যারিয়ারকে কীভাবে তিনি এগিয়ে নিয়েছিলেন, কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে বোলিং করতে হবে, নিজেকে নিজে কীভাবে সাহস দিতে হবে– এসব তিনি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন। আর বোলিং দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি তো অসাধারণ। দক্ষতা বাড়াতে তিনি আমাদের নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেন।’

ব্যাটারের আউট হওয়া পোড়ায় হাসানকে!

বোলারের কাজই হলো প্রতিপক্ষের ব্যাটারকে আউট করা। সেই প্রত্যাশিত কাজটি করতে পারলে আনন্দে মেতে ওঠেন বোলাররা। এই আনন্দের বেলায় আবার এক কাঠি সরেস পেসাররা। তাসকিন তো উইকেট পেলেই বুনো উদযাপন করেন। এবাদত স্যালুট দিয়ে সাজঘরের পথ ধরিয়ে দেন। অথচ তাঁদেরই সতীর্থ হাসান মাহমুদ এখানে ভীষণ ব্যতিক্রম। ব্যাটারকে আউট করে সাধারণ কোনো উদযাপন করতে দেখা যায় না ডানহাতি এ পেসারকে। গতকাল এ প্রসঙ্গটি তুলতেই এমন মানবিক হাসানের দেখা মেলে, ‘আউট হলে এমনিতেই ব্যাটারের মন খারাপ থাকে। তখন তাঁর সামনে গিয়ে উদযাপন করলে তো তাঁর আরও খারাপ লাগবে। তাই আমি এসব করি না।’

বোলিং পাননি সাকিব

৫০ ওভারের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান বোলিং পাননি এমন ঘটনা বিরল। অন্তত বাংলাদেশ দলের প্রয়োজনে তিনিই তো এনে দেন ব্রেক থ্রু। গতকাল হয়েছে তার উল্টো। পেসারদের দাপটের মাঝে বোলিংই পাননি সাকিব। একদিকে মামুলি টার্গেট, আরেকদিকে যে দুই স্পিনার হাত ঘুরিয়েছেন তাঁদেরও স্পেল শেষ করা লাগেনি। নাসুম তিন ওভার আর মিরাজ এক ওভার করেছেন। তবে এমন ঘটনা এর আগেও দু’বার ঘটেছে। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একবার আর ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকবার। ২০০৭ সালে মূলত বাংলাদেশের ১৩৮ রানের টার্গেট ৫ উইকেট হারিয়ে তাড়া করে ফেলে লঙ্কানরা। সেই ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে থাকা মোহাম্মদ আশরাফুল সাকিবের হাতে আর বল দেননি। আর ২০১৭ সালে বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যায় ম্যাচটি। যে কারণে আর বোলিং করার সুযোগ পাননি সাকিব।

হাসানের প্রথম ৫

ক্যারিয়ারে প্রথম এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করলেন হাসান মাহমুদ। গতকাল সিলেটে আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে এই সাফল্যের দেখা পান তিনি। এর আগে ওয়ানডেতে তাঁর সেরা বোলিং ছিল ২৮ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকার। বৃহস্পতিবার সেটাকে ছাড়িয়ে গেলেন হাসান। তাঁর আগে ১১ জন বাংলাদেশি এক দিনের ক্রিকেটে এক ইনিংসে কমপক্ষে পাঁচ উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন। হাসানের ওয়ানডে অভিষেক হলো বেশি দিন হয়নি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন তিনি। সে থেকে এখন পর্যন্ত আট ম্যাচে অংশ নিয়েছেন হাসান। যেখানে তাঁর মোট উইকেট ১৩টি। বোলিং ইকোনমি ৫.৫৯। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেওয়াই তাঁর এখন সেরা ওয়ানডে বোলিং এটি।

তিন পেসারে ১০

এই প্রথম তিন পেসার মিলে ১০ উইকেট শিকার করেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যেটা এর আগে দেখা যায়নি। গতকাল সিলেটে বাংলাদেশি পেসারদের সামনে রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পণ করেন আইরিশ ব্যাটাররা। প্রথম আঘাতটা হানেন হাসান মাহমুদ। ওপেনার স্টেফেনকে আট রানের মাথায় বিদায় করেন। এর পর মারকুটে স্টার্লিংকেও সাজঘরে পাঠান তিনি। সব মিলিয়ে হাসান নেন ৫ উইকেট। আর ১০ ওভার বোলিং করে ২৬ রান দিয়ে তিন উইকেট ঝুলিতে পুরেন তাসকিন আহমেদ। বাকি দুটি উইকেট শিকার করেছেন এবাদত হোসেন। যদিও স্পিন আক্রমণও করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ কোনো সাফল্যের দেখা পাননি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.