পরিবর্তনের কারিগর হোন, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রী

0
107
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

নতুন ও ভবিষ্যৎকে আলিঙ্গন করার মানসিকতার নিয়ে পরিবর্তনের কারিগর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত ‘বাংলাদেশ: একটি উন্নয়ন মডেল: শেখ হাসিনার কাছ থেকে শেখা’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাসসের

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করুন এবং পরিবর্তনের কারিগর হোন। মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করুন, আপন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মনোনিবেশ করুন এবং দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপন লোকজন ও দলের ওপর বিশ্বাস রাখুন। আপনার মাতৃ চেতনাকে জাগ্রত করুন এবং নতুন ও ভবিষ্যতকে আলিঙ্গন করুন।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই। স্মার্ট বাংলাদেশে একটি স্মার্ট সরকার, একটি স্মার্ট অর্থনীতি, একটি স্মার্ট জনসংখ্যা, একটি স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট জনশক্তি থাকবে। জনগণকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা হবে, যেন তারা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অবদান রাখতে পারে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা।

‘লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করছি। সারাদেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সরকার একটি ন্যানো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস বা প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সমাজে নারীদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আজ বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ। এটিকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, নিরক্ষরতা ইত্যাদি দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে।

‘বাংলাদেশে কষ্টার্জিত উন্নয়ন কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়। এটা আমাদের নারী-পুরুষের সম্মিলিত কাজ। আমি শুধু তাদের কাঙ্ক্ষিত পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছি। তবে আজকের অবস্থানে পৌঁছানো সহজ যাত্রা ছিল না কারণ সারাজীবন আমাকে অনেক অগ্নিপরীক্ষা ও নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবাকে তার জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে। আমরা সন্তানরা তার স্নেহ-ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। স্বাধীনতা লাভের পর সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই দেশের প্রতিষ্ঠাতা, আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমার মা, তিন ভাই, দুই ভগ্নীপতি এবং এক চাচাসহ আমাদের পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছোট ভাইয়ের বয়স ছিল তখন মাত্র ১০ বছর। সেদিন আমি এবং আমার বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গেছি। আমার বোন এবং আমাকে ছয় বছর ধরে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার দল আওয়ামী লীগ, আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করার পর ১৯৮১ সালে আমি দেশে ফিরি। আমি আমার বাবার দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও নিরক্ষরতামুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার অঙ্গীকার নিয়ে দেশে এসেছি। ফিরে এসে আমি খাদ্য ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছি। আমি বারবার অন্তরীণ ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমার জীবন নাশের জন্য কমপক্ষে ১৯ বার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর একটি ছিল ২০০৪ সালের আগস্টে যখন আমাকে হত্যা করার জন্য আমার ওপর এক ডজন আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আমি বেঁচে গিয়েছি, কিন্তু আমার দলের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত ও কয়েক শতাধিক আহত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে আমি শুধু দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আমি সংগ্রাম চালিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। আমার স্বপ্ন হলো আমাদের ব-দ্বীপকে আবারও সমৃদ্ধির দেশে পরিণত করা।

প্রধানমন্ত্রী কাতার ইকোনমিক ফোরাম-২০২৩ এ অংশ নেওয়ার জন্য দোহায় তিনদিনের সরকারি সফরে রয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.