নাগালের বাইরে ‘সস্তা’ ডাল

0
113
ডাল

রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খাবারের হোটেলের ব্যবসা ফারুক হোসেনের। ১৫ বছর ধরে ছোট্ট এ ব্যবসার আয়ে চলে তাঁর সংসার। এক বছর আগেও তিনি ভাতের সঙ্গে ক্রেতাকে বিনামূল্যে পাতলা মসুর ডাল দিতেন। এখন প্রতি বাটি ডাল বিক্রি করেন ১০ টাকায়। কারণ, বছরখানেক আগে সব ধরনের ডালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে থাকলেও এখন গিয়ে ঠেকেছে ৭৫ থেকে ১৪০ টাকায়। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি মসুর ডাল ১৪০, ভারতের মসুর ডাল ১২৫, মুগ ডাল ১৩০, খেসারি ডাল ৯০ ও বুটের ডাল ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। রমজান ঘিরে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। সেক্ষেত্রে ইফতার পণ্যের অন্যতম এ উপকরণের চড়া দাম আরও ভোগাবে ভোক্তাকে।

বিশ্ব ডাল দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে সেমিনারে জানানো হয়, দেশে বছরে ২৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে ডাল উৎপাদন হয় ১০ লাখ টন। আমদানি করতে হয় ১৪ লাখ টন। এতে বছরে খরচ হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা। তানজানিয়া, মোজাম্বিক, মিয়ানমার থেকে মুগ ডাল আমদানি করা হয়। রোজা এলে প্রতি বছর বিশ্ববাজারে ছোলার দাম বেড়ে যায়। এই সুযোগে মিয়ানমার ও অস্ট্রেলিয়াও ছোলার ডালের দাম বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, মসুর ডালের চাহিদা পূরণে চেয়ে থাকতে হয় নেপাল, চীন, কানাডা, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের দিকে।

ডালের দাম ভোক্তার নাগালে রাখতে দেশে উৎপাদন বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) আয়োজিত গতকালের সেমিনারে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, চালের দিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ডালসহ অন্যান্য ফসল প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। তবে আমরা ধানের উৎপাদন না কমিয়েই ডালের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। বছরে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন ডাল উৎপাদন করতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল, চরাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা, উপকূল, রেললাইন ও সড়কের ধারে এবং বসতবাড়িতে ডালজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে। ফল বাগানেও মিশ্র ফসল হিসেবে ডাল চাষ করা যায়।

বারির ডাল গবেষণা কেন্দ্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক গড়ে ৪৫ গ্রাম ডালজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। দেশে মাথাপিছু ডালের প্রাপ্যতা ২৮ গ্রাম হলেও মানুষ খাচ্ছে ১৭ গ্রাম।

বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেন, ডালের অনেক আধুনিক উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন হয়েছে। সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব জাত চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ২ দশমিক ৫ টনে উন্নীত করা সম্ভব।

এদিকে, ডাল উৎপাদন নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে রয়েছে বড় ধরনের অমিল। ফলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পরিকল্পনা নিতেও সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৩১ হাজার টন ডালজাতীয় শস্য উৎপাদন হয়। আর পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী একই অর্থবছরে ৩ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ২৪ হাজার টন ডালশস্য উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ দেখানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সঠিক তথ্য না থাকলে পরিকল্পনা নেওয়া কঠিন। এক্ষেত্রে তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.