নগরে ‘তরুণ’ এক গাছ মানুষ

0
103
জগলুল মূলক এভাবে রিকশা চালিয়ে শহরে খুঁজে বেড়ান গাছ।

জগলুল মূলক। এই শহরের গাছমানুষ! চুল-দাড়িতে পাক ধরলেও মনের দিক থেকে এখনও তরুণ। শহরের অলিগলি হয়ে মাঝেমধ্যে হাইওয়েতেও ঘুরে বেড়ান রিকশা নিয়ে। চিল চোখে খুঁজে বেড়ান গাছ। কোথাও কোনো গাছ অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকলে সে গাছটাই আগে চোখে পড়ে এই গাছমানুষের। এই তো সেদিন রিকশা নিয়ে গিয়েছিলেন রাজধানীর বনশ্রী এলাকায়। দেখলেন এক দোকানের উদ্বোধনে পিতা কাটা হচ্ছে। পাশেই রাখা আছে গাছ। তাঁর কেন যেন মনে হলো এই গাছ আজ যেমন গুরুত্ব পাচ্ছে, দু’দিন পর আর পাবে না সেই গুরুত্ব। তাই দু’দিন পর ফের গেলেন একই জায়গায়। দেখলেন, তাঁর ধারণা অনুযায়ী গাছ পড়ে রয়েছে ফুটপাতের পাশে, অনেকটা অবহেলায়। দোকানির কাছে চেয়ে সেই গাছ নিয়ে বনশ্রী খাল পাড়ে লাগিয়ে দেন জগলুল। এতেই শেষ নয়, রোজ সেই গাছের পরিচর্যাও করেন তিনি। এই শহরে এমন হাজারো গাছ লাগিয়েছেন জগলুল। পেশায় তিনি রিকশাচালক। বাড়ি মাদারীপুরে। এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা জগলুল ২০১৯ সালে ঢাকায় আসেন। এর আগে মাদারীপুরে থাকার সময়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। গাছ কেনার টাকা কই পান– এমন প্রশ্নে জগলুল বলেন, ‘আমি রিকশা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করি তার একটা অংশ দিয়ে গাছ কিনি। মাদারীপুর থাকতে স্থানীয় বন বিভাগের

সহযোগিতায় গাছ কিনতাম ৯ টাকা করে। ঢাকায় আসার পর সেই গাছ ১৫০ টাকায়ও পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুল গাছ কিনি। আর অযত্নে পড়ে থাকা গাছদের সঠিক যায়গায় লাগিয়ে যত্ন নিই। গাছের প্রতি মায়া জন্মায় কেমন করে– এই প্রশ্নের উত্তরে জগলুল বলেন, ছোটবেলা থেকেই গাছ ভালো লাগতো আমার। তবে মাঝে ঢাকার কাকরাইল-বিজয় নগরের গাছ কাটা দেখে খুব কষ্ট পাই। এই শহরে মানুষ থাকবে অথচ গাছ থাকবে না; এটা ভাবা যায় না। তাই আমি গাছ লাগাতে শুরু করি। আমি গাছ কিনে শহরের বিখ্যাত মানুষদের উপহার দেওয়ার চেষ্টা করি। তার কারণও ওই একটাই। তাদের মাধ্যমে যেন মানুষ গাছ লাগানোর গুরুত্বটা বুঝতে পারে। আজ সমকাল সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে গাছ উপহার দিতে এসেছি। শুনেছি তিনি গাছ পছন্দ করেন। আমার এই উপহার পেয়ে তিনি খুবই খুশি হয়েছেন।’

 

গাছ নিয়ে আগামীর পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে জগলুল মূলক বলেন, ‘আমি আসলে ঘরবাড়ি হারা। যদি একটা ঘর পাই সরকারের কাছ থেকে। এরপর আমি একটা নার্সারি বানিয়ে গাছ তৈরি করে সেই গাছ লাগিয়ে যেতে চাই। মানুষকেও বোঝাতে চাই যে, গাছ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রধানমন্ত্রীর নামে গাছ লাগিয়েছি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে। সেই গাছে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনেই ফুল এসেছে। রাষ্ট্রপতির নামে গাছ লাগিয়েছি। পদ্মা সেতুসহ দেশের বড় বড় যত উন্নয়ন সব কিছুর জন্যই আমি গাছ লাগিয়েছি। এসবই লিখে রেখেছি আমার ডায়েরিতে। ডায়েরি দেখে নিয়ম করে সেই গাছের যত্ন নিই। আগামীতেও এ কাজ করে যেতে চাই।’ দেশের জন্য, মানুষের জন্য এবং পরিবেশের জন্য কাজ করতে যে মানুষের ভালো অবস্থানের প্রয়ােজন পড়ে না; তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এই শহরের গাছমানুষ জগলুল মূলক। তাদের হাত ধরেই তো এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.