নওগাঁয় ৪২ মণের ‘পালোয়ান’ ও ‘সাদা পাহাড়’, দাম ২০ লাখ

0
103
শামীম ও তিথি দম্পতির লালন-পালন করা ষাঁড় নওগাঁর ‘পালোয়ান’ (সামনে) ও ‘সাদা পাহাড়’ পেছনে

বিক্রি হবে নওগাঁর ‘পালোয়ান’ ও ‘সাদা পাহাড়’। তবে নওগাঁর ‘পালোয়ান’ কোনো শক্তিশালী মানুষ নয়; ‘সাদা পাহাড়’ কোনো পাহাড়ের নাম নয়। এই দুটি আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য লালন-পালন করা দুটি ষাঁড়ের নাম। সাদা-কালোর মিশ্রণে সুঠাম স্বাস্থ্যের নওগাঁর ‘পালোয়ান’–এর ওজন ২০ মণ এবং ‘সাদা পাহাড়’–এর ওজন ২২ মণ। ষাঁড় দুটি বিক্রির জন্য দাম হাঁকা হয়েছে ২০ লাখ টাকা।

হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় দুটি দেশীয় পদ্ধতিতে নিজের বাড়িতে মোটাতাজা করেছেন নওগাঁ সদর উপজেলার পারবোয়ালিয়া চৌধুরীপাড়া গ্রামের শামীম হোসেন ও তিথি বেগম দম্পতি। শামীম পেশায় একজন ‘নরসুন্দর’। তিনি ঢাকার একটি সেলুনে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী তিথি বেগম গৃহিণী। তিনি তিন বছর ধরে লালন-পালন করে ষাঁড় দুটি এমন সুঠাম বানিয়েছেন। বিশাল আকৃতির ষাঁড় দুটি দেখার জন্য তাঁদের বাড়িতে প্রায়ই আশপাশের মানুষ ভিড় করে।

শামীম হোসেন বলেন, তাঁর শাশুড়ি ৬ থেকে ৭ বছর আগে ৮০ হাজার টাকায় হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গাভি কিনে দেন। পরে একই জাতের ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার করে চারবার কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে চারটি বাছুর জন্ম দেয় গাভিটি। এক বছর আগে ছয় মাসের একটি বাছুর, এক বছরের একটি বাছুরসহ গাভিটি ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। সেই ৩ লাখ টাকা দিয়ে দুটি ষাঁড় লালন-পালনের খরচ চালাচ্ছেন। তাঁদের পরিকল্পনা এবার ঈদুল আজহায় ষাঁড় দুটি বিক্রি করার।

শামীম হোসেন বলেন, অনেকেই ২০ মণ কিংবা ২২ মণ ওজনের গরুর দাম ১৪ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা চেয়ে থাকেন। কিন্তু বাজারে এত দামে বিক্রি করতে পারেন না। সেই বাস্তবতায় তিনি এত দাম চান না। গরু দুটি ২০ লাখ টাকা কেউ দিতে চাইলে বিক্রি করে দেবেন। ‘পালোয়ান’ ও ‘সাদা পাহাড়’–কে হাটে নেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই গরু দুটির ছবি ও বর্ণনা অনলাইনে দিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন।

 নওগাঁর ‘পালোয়ান’ দেখভাল করা হচ্ছে
নওগাঁর ‘পালোয়ান’ দেখভাল করা হচ্ছে

ষাঁড় দুটি এক মাস আগে নওগাঁ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় চত্বরে প্রাণিসম্পদ মেলায় ওঠানো হয়েছিল। সেখানে ডিজিটাল স্কেলে ‘সাদা পাহাড়’–এর ওজন হয় ২২ মণ আর ‘পালোয়ান’–এর ওজন হয় ২০ মণ। এখন আরও এক-দুই মণ করে ওজন বাড়তে পারে।

‘পালোয়ান’ ও ‘সাদা পাহাড়’–এর খাদ্যতালিকায় আছে কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, ভুট্টা, ডালের গুঁড়া, খইল, ছোলা ও খুদের ভাত। সব মিলে দিনে ২০ থেকে ২৫ কেজি করে খাবার খায় ‘পালোয়ান’ ও ‘সাদা পাহাড়’। শুরুর দিকে খাবার কম খেলেও দিনে দিনে তাদের খাবারের চাহিদার পরিমাণ বেড়ে যায়।

জন্মের পর থেকেই ষাঁড় দুটি দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করছেন বলে জানান শামীম। তিনি বলেন, ষাঁড় দুটি এক মাস আগে নওগাঁ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় চত্বরে প্রাণিসম্পদ মেলায় ওঠানো হয়েছিল। সেখানে ডিজিটাল স্কেলে ‘সাদা পাহাড়’–এর ওজন হয় ২২ মণ আর ‘পালোয়ান’–এর ওজন হয় ২০ মণ। এখন আরও এক-দুই মণ করে ওজন বাড়তে পারে।

সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তাঁর মা একটি গাভি কিনে দেন। সেই গাভি থেকে দুটি ষাঁড় হয়েছে। ষাঁড় দুটি নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছেন। ঈদের আগে এখন ভালো দামে বিক্রি করতে চান।
তিথি বেগম, গৃহবধূ, চৌধুরীপাড়া গ্রাম

কাজের কারণে স্বামী ঢাকায় থাকায় ষাঁড় দুটি লালন-পালনের পুরো কাজ সামাল দিয়েছেন শামীমের স্ত্রী তিথি বেগম। তিথি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাবার বাড়িতে গরু দেখে আসছেন। বিয়ে হয়ে এখানে আসার পর দেখেন অভাবের সংসার। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তাঁর মা একটি গাভি কিনে দেন। সেই গাভি থেকে দুটি ষাঁড় হয়েছে। ষাঁড় দুটি নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছেন। ঈদের আগে এখন ভালো দামে বিক্রি করতে চান।

এ ধরনের গরু লালন-পালন খুবই কষ্টকর বলে জানান শামীম হোসেন। তিনি বলেন, পরিবারের একজন সদস্যের মতো করে গরু লালন-পালন করতে হয়। পরিবারের সবাই মিলে যত্ন করে ষাঁড়টি বড় করা হয়েছে। ‘পালোয়ান’ ও ‘সাদা পাহাড়’–এর পেছনে তিন বছরে অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে তাঁদের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.