নওগাঁয় দুটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পড়ে আছে চার বছর

0
123
নওগাঁ জেলা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন চার বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। গতকাল দুপুরে তোলা

২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর জেলা কমপ্লেক্স ভবন ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবন উদ্বোধন করা হয়।

নওগাঁ জেলা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধনের পর চার বছর পার হয়েছে। প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনতলা ভবন দুটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। চার বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় ভবন দুটি ক্রমেই জৌলুশ হারাচ্ছে। ভবন দুটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় যে দোকানঘরগুলো করা হয়েছে, সেগুলো এখন পর্যন্ত বন্ধ পড়ে আছে।

সারা দেশের মতো নওগাঁ জেলা ও সদর উপজেলায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় কমিটি নেই। এ অবস্থায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দায়িত্বে রয়েছেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক। অন্যদিকে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দায়িত্বে রয়েছেন নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হয়েছিল ২০১৪ সালে। তিন বছর পরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আট বছর ধরে কোনো নির্বাচন হয় না।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এবং ২ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০১৮ সালে ৩০ জুলাই নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ এলাকায় সাবেক টাউন হলের জায়গায় ভবন দুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জেলা কমপ্লেক্স ভবন ও জেলার ১১টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবন উদ্বোধন করা হয়। সেই থেকে ভবন দুটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

শহরের পার-নওগাঁ এলাকায় ডায়াবেটিস সমিতি হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবন দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। নওগাঁ-সান্তাহার সড়কের সংলগ্ন ভবন দুটিতে প্রবেশের একটিই প্রধান ফটক। গতকাল রোববার গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে তালা দেওয়া। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বরে ময়লা-আবর্জনা ও ধুলা জমে রয়েছে।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের পোস্ট অফিসপাড়া এলাকায় কেডির মোড়সংলগ্ন পুরোনো কালেক্টরেট চত্বরে সরকারি একটি ভবনে জেলা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই স্থান শহরের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় অধিকাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা চেয়েছিলেন সেখানেই আধুনিক মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন করা হোক। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে নানা জটিলতার পর শহরের পার-নওগাঁ এলাকায় পুরোনো টাউন হলের জায়গায় জেলা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে ভবন নির্মাণের শুরু থেকেই অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা অসন্তুষ্ট ছিলেন। ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর প্রশাসন থেকে ভবন দুটি স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝিয়ে দিতে চাইলে তাঁদের একটি পক্ষ ভবনের টয়লেট নির্মাণে ত্রুটি হয়েছে বলে সেটি ব্যবহারে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী ভবন দুটির টয়লেট সংস্কার করা হয়। ত্রুটি সারানোর পর ভবন দুটি ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দুটি পক্ষ হয়ে গেছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন বলেন, ভবন দুটিতে বর্তমানে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সদ্য বিলুপ্ত জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাবেক কমান্ডারসহ কয়েকজন কমপ্লেক্সে ওঠার বিপক্ষে। অধিকাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ওই ভবন ব্যবহারে আগ্রহী। কিন্তু ভেদাভেদের কারণে ভবন দুটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। অন্তত ভবন দুটির নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা দোকানঘর হিসেবে ভাড়া দিলেও অনেক টাকা আসত। কিন্তু সেটাও করা হচ্ছে না। সিদ্ধান্তহীনতার কারণে দেশের সম্পদ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হতে বসেছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হারুন অল রশিদ বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরেও ভবনগুলোতে কিছু বিষয় ইনকমপ্লিট (অসম্পূর্ণ) ছিল। সে জন্য এত দিন সেখানে ওঠা হয়নি। ’

জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, ‘উদ্বোধনের পর ভবন দুটিতে টয়লেটে কিছু সমস্যার ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছিলেন। পরে তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী সেটা ঠিক করা হয়েছে। এখন ভবন দুটিতে দোকানঘরগুলো ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.