নওগাঁয় আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলার দুই দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ

0
110
নওগাঁ জেলার মানচিত্র

নওগাঁয় আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির সদস্য শফিকুর রহমান ওরফে মামুনকে (৪৫) পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। এ ঘটনায় শফিকুর রহমানের ছোট ভাই শাফিউর রহমান বাদী হয়ে দুই দিন আগে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। পুলিশ বলছে, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে মামলা রেকর্ড করা হবে।

আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমানকে গত বুধবার দুপুরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় পিটিয়ে জখম করা হয়। শফিকুর রহমান ও তাঁর সমর্থকদের অভিযোগ, রাজনৈতিক বিরোধের জেরে নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদের নির্দেশে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার পর শহরে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য হামলাকারীরা হাতে লোহার রড ও লাঠি নিয়ে শহরে মহড়া দেন। শহরের মুক্তির মোড় এলাকায় শফিকুর রহমানের অস্থায়ী কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগের নেতার ওপর হামলার পর নওগাঁয় মহড়া, মামলা নেয়নি থানা

হামলার শিকার আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান বলেন, ‘প্রকাশ্যে দিবালোকে হাসপাতালের করিডরে আমার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হাসপাতালেও সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে হামলাকারীদের চেনা যাবে। হামলার পর নাসিমের সন্ত্রাসী বাহিনী মুক্তির মোড়ে আমার অস্থায়ী কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। রাজনৈতিক বিরোধের জেরে আমার ওপর হামলার পর আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য নাসিমের লোকজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেকের কার্যালয়, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রফিকুল ইসলামের বাসা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে রড-লাঠি নিয়ে মহড়া দেয়। এসব ঘটনার পরও পুলিশ রহস্যজনক কারণে মামলা রেকর্ড করছে না।’

পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ বলেন, ‘বুধবার পুলিশি সুরক্ষায় নাসিমের লোকজন আমার কার্যালয়ের সামনে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে যায়। পুলিশ সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা বাদ দিয়ে তাঁদেরই সুরক্ষা দিচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করতে এসব করা হচ্ছে। নওগাঁয় এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আগে কখনোই ছিল না। এতে খুবই খারাপ নজির সৃষ্টি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফয়সাল বিন আহসান আজ শুক্রবার সকালে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে বিষয়টি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। আর পুলিশি সুরক্ষায় মহড়া দেওয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়।’

বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমানের ওপর হামলার পর তাঁর ছোট ভাই শাফিউর রহমান ওই দিন সন্ধ্যায় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শফিকুর রহমান একটি দরপত্রের বিষয়ে কথা বলতে বুধবার বেলা একটার দিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে যান। তত্ত্বাবধায়ককে কার্যালয়ে না পেয়ে তাঁর সাক্ষাতের জন্য হাসপাতালের পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় তত্ত্বাবধায়কের অফিস কক্ষসংলগ্ন স্টাফ কক্ষে বসে অপেক্ষা করছিলেন। বেলা দেড়টার দিকে রাজনৈতিক পূর্বশত্রুতার জেরে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদের নির্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র, চাকু, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ২০ থেকে ৩০ জন তাঁর ওপর হামলা চালান।

হামলাকারীরা তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পরে হাসপাতালের স্টাফ ও সেখানে উপস্থিত রোগীর স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলার পর শহরে আতঙ্কে সৃষ্টির জন্য হামলাকারীরা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে মহড়া দেন এবং মুক্তির মোড়ে শফিকুর রহমানের অস্থায়ী কার্যালয়ে আসবাব ভাঙচুর করেন।

অভিযোগের বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি ওই দিন হাসপাতাল এলাকাতেই যাইনি। আপনারা চাইলে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ এবং গোয়েন্দা বাহিনী, ডিএসবি-এনএসআই সদস্যদের কাছ থেকে খোঁজ নিতে পারেন। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.