দেরিতে হলেও উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ

0
108
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। গতকাল আলীপুর বন্দরের মৎস্য আড়তে

‘এবার ইলিশ ভালোই ধরা পড়তেছে। কেউই খালি হাতে ফিরছে না। ইলিশের সাইজ বাড়ছে যে হেইডাও বোঝা যাইতেছে। তয় ছোট-বড় সব সাইজের ইলিশই ধরা পড়ছে।’ সাগর থেকে ফিরে চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার এফবি মা-বাবার দোয়া ট্রলারের মাঝি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এসব কথা বলছিলেন।

কথা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গতকাল তিনি গভীর সাগরে গিয়ে জাল ফেলেন। তাঁর জালে ৫০ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে। এক, দেড় ও দুই কেজি ওজনের ইলিশ ধরা পড়েছে বেশি। তবে এর চেয়ে ছোট আকারের ইলিশও ধরা পড়েছে তাঁর জালে। তিনি ৫০ মণ ইলিশ ডাকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।

গত দুই দিনে সাগর থেকে ধরা পড়া ইলিশের পরিমাণ বাড়ায় পটুয়াখালী উপকূলের কুয়াকাটা, মহিপুর, আলীপুর, খালগোড়া এলাকার আড়তগুলো কেনা-বেচা জমে উঠেছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের মোকাম হিসেবে পরিচিত মহিপুর ও আলীপুর মৎস্য বন্দরের আড়তগুলোতে মাছ আসছে অনেক। ৬৫ দিনের অবরোধ উঠে যাওয়ার পর জেলেরা সাগরে নামতে না নামতেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পড়ে কূলে ফিরে আসেন। আবহাওয়া অনুকূলে আসার পর জেলেরা আবার সাগরে ফিরে যান। এবার সবাই কম-বেশি ইলিশ নিয়ে কূলে ফিরছেন।

সাগরের কূলঘেঁষা এসব আড়তে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও কলাপাড়া পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার মাছবাজার, এতিমখানা মোড় ও নিশানবাড়িয়া ব্রিজ-সংলগ্ন মাছের সন্ধ্যা বাজারে সেভাবে ইলিশ দেখা যাচ্ছে না। স্বল্প পরিমাণে ইলিশ এসব বাজারে উঠলেও দাম অনেক বেশি বলে ক্রেতাদের দাবি।

মাছের আড়তদারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এবার ৮০০ গ্রাম, ৯০০ গ্রাম ও ১ কেজি আকারের ইলিশ ৪৭ থেকে ৪৮ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ১ কেজি ২০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম আকারের ইলিশ ৬০ থেকে ৬১ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।

আলীপুরের সরকারি মৎস্য বাজারজাত কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, এফবি জুবায়ের ইসলাম-২ ট্রলারটি ৭০ মণ ইলিশ নিয়ে এসেছে। ২৫ লাখ টাকায় এই মাছ বিক্রি হয়েছে। এফবি বিলকিস-১ নামের ট্রলার ৬০ মণ ইলিশ নিয়ে এসেছে। এই মাছ বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ টাকায়। এফবি বিলকিস-২ নামের ট্রলারটি ৭০ মণ ইলিশ নিয়ে এসেছে, মাছগুলো বিক্রি হয়েছে ২২ লাখ টাকায়। শুধু ১৬ আগস্ট আলীপুর কেন্দ্রে ১১টি মাছ ধরার ট্রলার সাগর থেকে ৭০০ মণ ইলিশ মাছ নিয়ে ফিরেছে। এগুলো বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকায়।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ও ইলিশ গবেষক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ইলিশ আহরণ বেড়েছে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার দেরিতে ইলিশ আহরণ শুরু হয়েছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, আলীপুর-মহিপুরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এ বছর সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারে বড় ও মাঝারি আকারের ইলিশের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। টুনা, ছুড়ি, পোয়াসহ অন্যান্য মাছও অনেক ধরা পড়ছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়েছে। বর্তমানে উজানের পানি সরবরাহ ও বৃষ্টি বাড়ায় জলজ তাপমাত্রা কাম্য পর্যায়ে এসেছে। নদী ও উপকূল মোহনায় পানির উচ্চতা বাড়ায় লবণাক্ততা সহনীয় মাত্রায় এসেছে। সাগর থেকে উপকূলের দিকে ইলিশের যাত্রা শুরু হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে।

নেছারউদ্দিন আহমেদ

কলাপাড়া, পটুয়াখালী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.