দেবে গেছে ১০ গ্রামের ভরসা বাঁশের সেতুটি

0
83
পদ্মার শাখানদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সেতু মাঝখানে ভেঙে গেছে। এর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন গ্রামবাসী। গতকাল গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ক্যানালঘাটে

ক্যানালঘাট এলাকায় পদ্মার শাখানদীর ওপরে বাঁশ দিয়ে তৈরি সেতুটি যেকোনো মুহূর্তে সম্পূর্ণ ধসে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ক্যানালঘাট এলাকায় পদ্মার শাখানদীর ওপরে বাঁশ দিয়ে তৈরি সেতুটি এক সপ্তাহ আগে মাঝবরাবর দেবে যায়। এখন ওই সেতুর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। সেতুটি যেকোনো মুহূর্তে সম্পূর্ণ ধসে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কিয়ামদ্দিন মোল্লা পাড়া, নুরু মণ্ডল পাড়া, লালু মণ্ডল পাড়া, নাসির সরদার পাড়া, ২ নম্বর ব্যাপারী পাড়া, ইদ্রিস শেখের পাড়া, সাহাজদ্দিন ব্যাপারী পাড়া, নতুন পাড়া এবং দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সী পাড়া, কাওয়ালজানি, দেবগ্রাম অঞ্চলসহ ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। এসব গ্রামের কৃষকেরা উৎপাদিত ফসল আনা–নেওয়া ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে সেতুটি ব্যবহার করে।

গত শনিবার ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় হারুন শিকদার, হামেদ আলী, নিকবার মণ্ডলসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার সকালে সেতুটির ওপর থেকে পড়ে নিখোঁজ হয় স্থানীয় রফিক মোল্লা নামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রবিন মোল্লা (১২)। এলাকাবাসীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সন্ধান চালিয়েও তাঁকে পায়নি। পরদিন বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নদীতে রবিনের লাশ ভেসে ওঠে। এর আগে উদ্ধার অভিযান দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড়ে সেতুটি মাঝবরাবর দেবে যায়।

স্থানীয় বসিন্দা আসমা বেগম বলেন, ‘আমাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সেতু। এক সপ্তাহ ধরে সেতুর মাঝবরাবর দেবে গেলেও এখন পর্যন্ত সংস্কার করা হচ্ছে না। আর কয়েক দিন পর বর্ষার পানির স্রোতে এটি টিকবে বলে মনে হয় না।’

বাঁশের সাঁকোর এক প্রান্তে ছয়টি, অপর প্রান্তে চারটি গ্রাম রয়েছে উল্লেখ করে লালু মণ্ডল পাড়ার কৃষক মজনু সরদার বলেন, প্রতিদিন এসব গ্রামের মানুষজনের যাতায়াতের একমাত্র ব্যবস্থা এই সেতু। কৃষকেরা সেতুর ওপর দিয়ে কৃষিপণ্য রিকশা-ভ্যান বা মাথায় করে আনা-নেওয়া করেন। দেবে যাওয়ার পর এখন সেতুটি দিয়ে ভ্যান তো দূরের কথা, সাইকেল নিয়েও যাওয়া যায় না।

উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান খান বলেন, মাটি পরীক্ষা শেষে প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নদীশাসন হলে বরাদ্দ পাওয়ামাত্র ব্রিজের কাজ শুরু হবে। নদীশাসন না হলে ব্রিজের কাজ করা কঠিন হবে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, নদীভাঙনকবলিত এলাকা হওয়ায় ২০১৯ সালে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে বাঁশ দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে খরচ হয় প্রায় তিন লাখ টাকা। দুই বছর আগে বাঁশ-খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেলে নতুন করে নির্মাণ করা হয় এ সেতু।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আইয়ুব আলী খান বলেন, ‘দুই বছর আগেও প্রায় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা খরচ করে বাঁশের সেতুটি সংস্কার করেছিলাম। এর মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি টাকা দেওয়া হয়নি।’

ফেরিঘাট এলাকার স্থানীয় হকার সেকেন্দার আলী বলেন, ‘ফেরিঘাটে হকারি করে মালামাল নিয়ে বাড়িতে আসতাম। এখন সেতু দেবে যাওয়ায় কোনো মালামাল আনতে পারি না। ঘাটেই এক দোকানে রেখে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়।’

দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শিহাব শেখ বলে, ‘আমরা অনেকে প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে স্কুলে আসা–যাওয়া করি। বাঁশ পচে যাওয়ায় প্রায় এক মাস ধরে সেতুটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। আমরা এখন খুবই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি।’

এলজিইডির মাধ্যমে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মণ্ডল বলেন, ইউপি সদস্য প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে সেতুটি করার পর সব টাকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। তাঁর কোনো টাকা বকেয়া নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.