দুই উপজেলায় গবেষণা: বড় ধরনের শিখনঘাটতিতে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

0
64
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে ‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ঢাকা, ৪ মার্চ

দুটি উপজেলার শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণার তথ্য বলছে, সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে বড় রকমের শিখনঘাটতি (লার্নিং গ্যাপ) রয়েছে। এর মধ্যে একটি উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাংলায় ঘাটতি রয়েছে। আরেকটি উপজেলায় একই শ্রেণির ইংরেজিতে প্রায় ৮২ শতাংশের ঘাটতি রয়েছে।

সাধারণভাবে একেকটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের যেসব দক্ষতা বা যোগ্যতা অর্জন করার কথা বা যেসব প্রত্যাশা পূরণ করার কথা, তার প্রাপ্তিকে শিখন অর্জন বলা হয়।
আজ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হেমপেল ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সেভ দ্য চিলড্রেন ও গণসাক্ষরতা অভিযান যৌথভাবে কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার ৩২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি উন্নয়নে নিরাময়মূলক (রেমেডিয়াল) সহায়তা দেওয়ার জন্য এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এই কর্মসূচি নেওয়ার আগে গত বছর রাজারহাট ও মাদারগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার্থীদের ওপর একটি গবেষণা করা হয়। সেই গবেষণায় ওই দুই উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতির তথ্য উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এই কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক মো. শাহীন ইসলাম। ওই দুটি উপজেলার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি মিলিয়ে মোট ২ হাজার ২৯ শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিতে কমবেশি ২০০ করে শিক্ষার্থী নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণার তথ্য বলছে, রাজারহাট উপজেলায় বাংলা বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিখনঘাটতি রয়েছে। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে একই বিষয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিখনঘাটতি দেখা যায়। মাদারগঞ্জে একই বিষয়ে পঞ্চম শ্রেণির ৫৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর ঘাটতি দেখা গেছে। গণিতে রাজারহাটের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভালো করলেও মাদারগঞ্জের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছে। মাদারগঞ্জে প্রথম শ্রেণিতে ৪৮ শতাংশের বেশি এবং পঞ্চম শ্রেণিতে প্রায় ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর গণিত বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে। ইংরেজিতেও শিখনঘাটতির চিত্র উঠে এসেছে গবেষণায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী করোনাকালে শিশু থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, আগামী একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বৈঠকে ‘স্কুল মিল প্রকল্প’ উঠবে। এটি হলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ হবে বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এই শিখনঘাটতি পূরণ করে দেওয়া সুযোগ নয়, এটি তাদের অধিকার।

রাশেদা কে চৌধূরী সবাইকে মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, কোনো শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার অধিকার কারও নেই।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক উত্তম কুমার দাস, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা) অধ্যাপক এ কিউ এম শফিউল আজম, সেভ দ্য চিলড্রেন ডেনমার্কের কর্মকর্তা রিকে হব ব্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের এদেশীয় পরিচালক সুমন সেনগুপ্ত প্রমুখ। এ ছাড়া মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.