তাঁর যে কোনো কাজ চোখ বন্ধ করে করা যায়: অপি করিম

0
108
অপি করিম

মায়া কি কখনও জঞ্জাল হতে পারে! মানুষের মায়ার শেষ নেই। জীবনের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকেই এক মায়ার বেড়াজালে বাঁধা। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই ছোটগল্প ‘বিষাক্ত প্রেম’ ও ‘সুবালা’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘মায়ার জঞ্জাল’।

এটি পরিচালনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী। সিনেমার গল্পে উঠে এসেছে নিম্নবিত্তের বাঁচার লড়াই। যেখানে পেটের দায়ে অনেকেই কোনো রকম একটা কাজ করে। নানা কারণে সেই কাজও প্রায় যায় যায় অবস্থা। তখন বেঁচে থাকাটাই যেন হয় একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

চাঁদু একটি প্লাস্টিক কারখানায় চাকরি করত, সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। সে এখন একটি এটিএম বুথের গার্ড। তার সংসারে আছে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী সোমা ও এক ছেলে। মানুষের ছোটখাটো আশা-আকাঙ্ক্ষা যেমন থাকে, চাঁদু আর সোমারও আছে। ছেলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়বে, টেলিভিশনে গানের রিয়েলিটি শোতে অংশ নেবে। ফলে সোমা আর চাঁদু তাদের ছেলেকে গান শেখায়। চাঁদু চায় তিনজন মিলে কোথাও একটু বেড়াতে যেতে।

এই ছোট ছোট চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে চাঁদু আর সোমা যা করে, সেসবই দেখানো হয়েছে ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমায়। চাঁদু-সোমার পাশাপাশি দেখানো হয়েছে এক পতিতা ও এক চোরের ভালোবাসা-ঘৃণা এবং ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে ফেলার গল্প, যা সিনেমার প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে থাকে।
‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিতে সোমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন অপি করিম। তাঁর স্বামী চাঁদুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। দীর্ঘ বিরতির পর এই ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় ফিরলেন অপি করিম। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার একযোগে দুই দেশে মুক্তি পাচ্ছে। এ উপলক্ষে গত সোমবার ছবিটির একটি বিশেষ প্রদর্শনী হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন ছবির কলাকুশলীরা। ঋত্বিকের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত অপি করিম। কারণ তিনি আগাগোড়া এই অভিনেতার কাজে মুগ্ধ। অপির ভাষ্য- ‘আমি নিয়মিত কাজ করি না। আবার কবে কাজ করব তাও জানি না। ঋত্বিকের সঙ্গে এই কাজটি ব্যক্তিগতভাবে দারুণ উপভোগ করেছি। সবাই ছবিটি নিয়ে বেশ ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।’

২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ ছিল অপি করিম অভিনীত প্রথম সিনেমা। এরপর আর বড় পর্দায় পাওয়া যায়নি তাঁকে। দেড় যুগেরও বেশি সময় পর আবারও বড় পর্দায় ফিরলেন তিনি। অপি বলেন, ‘মাঝখানে এত লম্বা সময়ে এমন না যে সিনেমার প্রস্তাব পাইনি। পেয়েছি, কিন্তু নির্মাতা পছন্দ হয়নি। মানে বুঝতে পারছিলাম না তাঁর সঙ্গে কাজ করা ঠিক হবে কি হবে না। দ্বিতীয়ত, এমন গল্পও পাইনি, যার জন্য একবাক্যে আমি রাজি হতে পারতাম। তৃতীয়ত, আমার নিজের স্থাপত্য পেশা। এমনও হয়েছে, সিনেমা নিয়ে কথা হয়েছে, নিমরাজিও হয়েছি; কিন্তু সময় মেলাতে পারিনি।’

তাহলে এই ছবিতে রাজি হয়েছেন কী মনে করে? অপি বললেন, “একদিন এই ছবির প্রযোজক জসীম আহমেদ আমাকে যৌথ প্রযোজনার ছবিটির কথা বললেন। এরপর তিনি জানালেন, এটি নির্মাণ করবেন কলকাতার ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী। সাধারণত এসব প্রস্তাব পেলে শুরুতে খানিকটা অনাগ্রহ দেখাই। কিন্তু এবার তা হলো না। কারণ এটি ইন্দ্রনীলের কাজ। তাই গল্প না জেনে, নির্মাতার নাম শুনেই বলেছিলাম- সব ঠিক থাকলে কাজটি করতে চাই। ইন্দ্রনীল দারুণ নির্মাতা। ‘ফড়িং’ আর ‘ভালোবাসার শহর’ এই দুটি কাজ যিনি বানাতে পারেন, তাঁর যে কোনো কাজ চোখ বন্ধ করে করা যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প দুটি আবারও পড়লাম। এরপর চিত্রনাট্য পড়লাম। সেটিও আমাকে খুব টেনে নিল। মায়ার জঞ্জাল ছবির গল্প ওপর থেকে দেখলে মনে হবে ঢেউয়ের মতো। একটি চরিত্রের সঙ্গে অন্য একটি চরিত্রের কী নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করেছে।” মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ আসতেই জানতে চাই, মানিকের যে দুটি গল্প [বিষাক্ত প্রেম ও সুবালা] থেকে ‘মায়ার জঞ্জাল’ তৈরি হয়েছে, এগুলো লেখা পঞ্চাশের দশকে। তখনকার জীবনযাপনের যে সংকট, তা এ সময়ে এসে বদলেছে? অপি বললেন, “মূল সংকটগুলো বদলায়নি। সময়, সমাজ, মানুষের আদর্শগত জায়গা অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এখনও মানুষ বাঁচার লড়াই করে যাচ্ছে। একটা ভালো ছবিতে একটা সময়ের চিহ্ন থাকে, যা ‘মায়ার জঞ্জাল’-এ আছে। প্রতিটি চরিত্র ও তাদের সংকটগুলো কিন্তু আমাদের অচেনা নয়।”

ছবিটি দর্শক কীভাবে নেবেন জানতে চাইলে অপি বলেন, এই ছবির প্রতিটি চরিত্রে এত শেড, লেয়ার আর সম্পর্কের ঢেউ আছে যেগুলো, মানবিক চিত্র তুলে ধরবে। একেকটি চরিত্রে একেক ধরনের মানবিক বিষয় কাজ করবে, দর্শক দেখার পরই তা বুঝতে পারবেন।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.