তপশিল নিয়ে তোড়জোড়

0
60
নির্বাচন কমিশন (ইসি

দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত ৫০ মহিলা আসনে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। তবে তপশিল ঘোষণার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার অনেক কিছু এখনও বাকি। আইন অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের গেজেট হয়েছে ৯ জানুয়ারি। সে হিসেবে ইসিকে ভোটের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ৭ এপ্রিলের মধ্যে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারে ইসি। তবে যে কোনো নির্বাচনে ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে তপশিল ঘোষণার সুযোগ নেই।

জানা গেছে, আগামী মার্চের মধ্যে ভোট করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য সংসদ সদস্যদের ভোটে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের নজির নেই। সংসদের আসনের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত সংরক্ষিত মহিলা আসনে রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো তাদের নির্ধারিত আসনের জন্য একক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনে তপশিল ঘোষণার প্রয়োজন পড়লেও ভোটার ও আসন বণ্টনসহ কমিশনকে এই নির্বাচনের নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইনে বলা আছে, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা শপথ নিয়েছেন, তাদের তথ্য তিন কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ সচিবালয় থেকে ইসিকে পাঠাবে। সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার যুগ্ম সচিব নাজমুল হক জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে শপথ নেওয়া ২৯৮ জনের তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

আইন অনুযায়ী, নির্বাচিতদের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরবর্তী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দল বা জোটগুলো বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের জোটের অবস্থান নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। অর্থাৎ ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিজয়ী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা তাদের অবস্থান ইসিকে জানাবেন।

এবারের নির্বাচনে ৬২ স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি হয়েছেন। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের বাইরে নিজ দলের প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছে মাত্র দুটি দল– জাতীয় পার্টি ১১ আসনে ও কল্যাণ পার্টি একটি আসনে। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ দুটি আসনে জিতলেও তারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে।

এদিকে আইনে বলা আছে, গেজেট হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ইসি সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি সদস্যদের আলাদা তালিকা প্রস্তুত করবে। সে অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দল বা জোটগুলোকে ইসিতে তাদের অবস্থান জানাতে হবে। ইসি আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সদস্যদের তালিকা (ভোটার) প্রস্তুত করবে।

তালিকা প্রস্তুতের পরের কার্যদিবসে, অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি সেই তালিকা ইসিতে প্রকাশ্যে কোনো স্থানে টানিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে সংসদ সচিবালয়ে টানানোর জন্য সেই তালিকার অনুলিপি পাঠাবে। নির্বাচনের আগে তালিকায় আর কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো করণিক ভুল হলে ইসি তা সংশোধন করতে পারবে।
আসন বণ্টনে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যদের জন্য কোনো নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকা নেই। তারা শুধু দল বা জোটের সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন। এ ক্ষেত্রে দল বা জোটের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে নারী আসন ভাগ হবে।

সংবিধান অনুসারে বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৫০টি। এই ৫০ সংখ্যাকে ৩০০ সংসদীয় আসন দিয়ে ভাগ করলে যে ফল পাওয়া যাবে, তাকে কোনো দল বা জোটের যে সংখ্যক সদস্য শপথ নিয়েছেন, তা দিয়ে গুণ করলে যে ফল পাওয়া যাবে, সেই সংখ্যক নারী সদস্য হবে ওই দল বা জোটের। গুণফল ভগ্নাংশ হলে সে ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৫ (০.৫) বা তার থেকে বেশি সংখ্যকের জন্য একটি আসন পাওয়া যাবে। আইনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে লটারির বিধানও রয়েছে।

সে হিসাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২২৩ আসনের বিপরীতে ৩৭ জন নারী সদস্য পাচ্ছে। জাতীয় পার্টির ১১টি আসনের বিপরীতে ২ জন, স্বতন্ত্র ৬২ জন জোটবদ্ধভাবে ১০ জন সদস্য এবং বাকি তিন দল (জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি) জোটগতভাবে এলে তারা একটি আসন পাবে। অবশ্য সংরক্ষিত আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে চাইলে যে কোনো দল বা জোট তাদের ইচ্ছামতো যে কোনো দল বা জোটের সঙ্গে একত্রীভূত হতে পারবে।

আইন অনুযায়ী, শপথ নেওয়া সংসদ সদস্যরাই সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে ভোটার হবেন এবং এ ভোটাররা শুধু নিজেদের দলের প্রাপ্ত আনুপাতিক আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে পারবেন।

আইন অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে তপশিল ঘোষণা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইসির ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভোটের প্রয়োজন পড়লে সংসদ ভবনে কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো এ ভোটের জন্য সংসদের কোনো বৈঠকের প্রয়োজন নেই। এদিকে আইন অনুযায়ী, কোনো দল বা জোট যদি তাদের প্রাপ্য মহিলা সংসদ সদস্যপদে প্রার্থী না দেয় বা প্রাপ্য আসনের চেয়ে কম দেয়, সে ক্ষেত্রে ওই আসনগুলোতে ভোটের প্রয়োজন পড়বে। এ ক্ষেত্রে দলভিত্তিক কোনো বণ্টন হবে না। সব দল বা জোট প্রার্থী দিতে পারবে।

৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের পর ৯ জানুয়ারি নবনির্বাচিত এমপিদের গেজেট প্রকাশ করে ইসি। এরপর ১০ জানুয়ারি ২৯৮ সদস্য শপথ নেন। পরে স্থগিত ময়মনসিংহ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ভোট বাতিল হওয়া নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচনের জন্য ইসি নতুন তপশিল ঘোষণা করেছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ওই আসনের ভোট হবে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের তপশিলের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটার তালিকা তৈরিসহ প্রাথমিক কাজ গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হলে তপশিল দেওয়া হবে। চলতি সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে তপশিল হলে ফেব্রুয়ারিতে ভোটের তারিখ রাখা হতে পারে।

উপজেলা ভোট রোজার আগেই শুরু

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন রোজার আগেই শুরু করতে চায় ইসি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা ও মধ্য মার্চে রোজা শুরুর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তপশিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

তিনি বলেন, এবারও প্রথম ধাপে শতাধিক উপজেলা পরিষদের ভোট হতে পারে। চার-পাঁচ ধাপে ভোট শেষ করা হতে পারে। রোজার আগে প্রথম ধাপ ও পরে অন্য ধাপগুলো হবে। সে ক্ষেত্রে উপজেলার সংখ্যা ও ভোটের তারিখ কমিশন সভায় চূড়ান্ত হবে। আগামী সপ্তাহে কমিশনের অনুমোদন পেলেই তপশিল ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর নির্বাচন করতে হয় মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। ইতোমধ্যে নির্বাচন উপযোগী উপজেলার তালিকা সংগ্রহ করেছে ইসি। সবশেষ ২০১৯ সালে মার্চ থেকে জুনের মধ্যে পাঁচ ধাপে ভোট সম্পন্ন করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.