সিলেটে গরু যতই বড় হোক না কেন, চামড়া ৩০০ টাকায়, বগুড়ার শেরপুরে মাঝারি আকারের চামড়া ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এবার ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়নি। ঈদের দিনে গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার পোস্তায় মাঝারি আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০-৮৫০ টাকায়। তবে সিলেটে গরু যতই বড় হোক না কেন, চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায়। বগুড়ার শেরপুরে মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঈদের আগে ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৭-৫২ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয় ৪৫-৪৮ টাকা, যা গতবার ছিল ৪০-৪৪ টাকা। তবে গরুর চামড়ার দাম বাড়লেও খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা আর বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়।
গরুর চামড়া ৫০-৩০০ টাকা
সিলেটে কোরবানির পশুর চামড়া ফুট হিসেবে নয়, পিস হিসেবে বিক্রি হয়েছে। গরু যতই বড় হোক না কেন, চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০-২০ টাকায়।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের দিন ও পরদিন শুক্রবার সিলেটে প্রায় ৮০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে গুদামে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১২-১৫ দিনের মধ্যে সেগুলো ট্যানারিমালিকদের কাছে পাঠানো হবে।
সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার বাসিন্দা রাজিউল করিম জানান, তিনি এবার ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ২৫০ টাকায়।
সিলেটের শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ শামীম আহমদ বলেন, সিলেটে পিস হিসাবে চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা চামড়াগুলোর দাম কিছুটা কম থাকে। কারণ, গ্রামাঞ্চলে কোরবানি দেওয়া গরুগুলোর আকার ছোট হয়। শহরাঞ্চলে বড় গরু কোরবানি দেওয়া হয় বলে দামও কিছুটা বেশি।
শেরপুরে ছাগলের চামড়ার দাম মেলেনি
বগুড়ার শেরপুরে এ বছর প্রায় এক কোটি টাকার কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। যদিও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর চামড়া কম দামে বিক্রি হয়েছে। ছাগলের চামড়ার কোনো দামই মেলেনি।
ঈদের দিন ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর পৌর শহর-সংলগ্ন হাজীপুর এলাকায় চামড়ার বাজার বসে। সেখানে চামড়া বিক্রি করতে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী রঞ্জু মিয়া জানান, তিনি ২০ টাকা করে ১০০ ছাগলের চামড়া কিনেছেন। একটিও বিক্রি করতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, গত বছর দেড় লাখ টাকা মূল্যের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০-৮০০ টাকায়। এবার বিক্রি হয়েছে ৪০০-৫০০ টাকায়। একই কথা বলেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান ও গোলাম রব্বানী।
শেরপুরের স্থায়ী চামড়া ব্যবসায়ী গোলাম ফারুক জানান, যেসব চামড়ায় ক্ষত দাগ রয়েছে, সেগুলো বিক্রি করতে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়। এ জন্য এ ধরনের চামড়ার দাম কম। তাঁরা একটু নিম্নমানের প্রতিটি চামড়া কেনেন ৩০০-৩৫০ টাকায় আর ভালো মানের চামড়ার দাম ৯০০ টাকা পর্যন্ত দেন।
যশোরে কোটি টাকায় চামড়া বেচাকেনা
ঈদের দিন দুপুর থেকে পরদিন শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত যশোরের রাজারহাট মোকামে কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এবারও চামড়ার ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ হয়েছেন।
গত শুক্রবার রাজারহাট মোকামে গিয়ে দেখা গেছে, আড়তদারেরা চামড়া কিনে তাতে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন। এই মোকামে ফড়িয়া মো. ওয়াসিম বলেন, ‘ঈদের দিন ১৫টি গরুর চামড়া কিনে বিক্রি করেছি। ৩০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম কম পেলাম। যে দামে কেনা সেই দামেই বিক্রি করতে হয়েছে।’
আড়তদার গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘ঈদের দিন দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তিন হাজার গরুর চামড়া কিনেছি। সংরক্ষণ খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। ট্যানারির মালিকেরা তো বেশি দাম দেবেন না। যে কারণে বেশি দামে চামড়া কেনা যাচ্ছে না।’
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল বলেন, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার গরু ও ৩০ হাজার ছাগলের চামড়া এসেছে, যা কোটি টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।