ডিজিটাল আইনে মামলা অভিযুক্তদের ভোগান্তি কমানোর পথ খুঁজছে সরকার

0
98

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্তদের ভোগান্তি কমানোর পথ খুঁজতে শুরু করেছে সরকার। কঠোর এ আইনটি বাতিল করে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে। আইনটি পাস হলে আগের আইনে অভিযুক্তরা বাড়তি কিছু সুবিধা পেতে পারে। নতুন আইনে জামিন লাভ সহজ হতে পারে, কমতে পারে সাজা।  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ইতোমধ্যে অভিযুক্তদেরও এ সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সরকারের এমন মনোভাবের কথা জানা গেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংশোধনের সঙ্গে যুক্ত সরকারের আইন বিশেষজ্ঞরা অভিযুক্তদের ভোগান্তি নিরসনের বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন। বিষয়টি কীভাবে নতুন আইনে যুক্ত করা হবে, তা নিয়ে আইনি যুক্তি তৈরি করতে কাজ করছেন তারা। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ‘বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ’ শীর্ষক ৩৫ অনুচ্ছেদের বিধান নিয়ে মূল আলোচনা হচ্ছে। ৩৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘…অপরাধ-সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দণ্ড দেওয়া যাইতে পারিত, তাহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না।’

আলোচ্য অনুচ্ছেদের বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দেওয়া কথা ভাবছে। সেটা কীভাবে সম্ভব করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তা চলছে।

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্তদের ভোগান্তি কমানোর ক্ষেত্রে ৩৫ অনুচ্ছেদের চুলচেরা বিশ্লষণ হচ্ছে। কিন্তু সংবিধানের এ অনুচ্ছেদটিতে যে আইনে বিচার চলমান থাকে, সে আইনের বিধান অনুযায়ীই বিচার করতে হবে– এমন বিধান রয়েছে। কোনো কারণে নতুন আইন প্রণয়ন করলে বা চলমান আইন সংশোধন করলে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে কোনোভাবেই বিদ্যমান দণ্ডের চেয়ে বেশি দণ্ড দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে সংবিধানে ‘ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না’ উল্লেখ থাকায় বেকায়দায় পড়েছে সরকার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকার চাইছে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখতে। কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয় যাতে না থাকে, তাও নিশ্চিত করতে চেষ্টা চলছে।

ডিজিটাল আইনে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টির কথা আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সাংবাদিকদের বলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে অপরাধ করার সময়ে যে আইন বলবৎ ছিল, সেই আইনেই সাজা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত আছে, কোনো ভিন্নতর সাজা দেওয়া যাবে না।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আমরা অনেক চিন্তাভাবনা করেছি। যখন বিলটি সম্পূর্ণভাবে জাতীয় সংসদে পাস হবে, তখন জবাব পাবেন।’

মন্ত্রিসভায় ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে হওয়া মামলাগুলো এমনভাবে নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে, যাতে ধরে নিতে হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হয়নি। তাই যারা ডিজিটাল আইনের মামলায় ভুক্তভোগী, তাদের বাড়তি সুরক্ষা দিতে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে বিশেষ বিধান রাখতে হবে, এমনটাই বলছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আরিফ খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চূড়ান্তভাবে বাতিল হওয়ার আগ পর্যন্ত এ আইনের অধীনে হওয়া মামলার তদন্ত ও বিচার আগের মতোই হবে, এটাই আইনের নিয়ম। আগের আইনের সংশোধন বা নতুন প্রণীত আইনে পুরোনো আইনে থাকা শাস্তি ও জরিমানা কমানোর কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হলে সংবিধানের ব্যত্যয় হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধান নাগরিকের সর্বোচ্চ রক্ষাকবচ। ৩৫(১) অনুচ্ছেদ আইনপ্রণেতাদের শাস্তির পরিবর্তন বিষয়ে সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে, যাতে অপরাধ সংঘটনের সময় প্রচলিত আইনে গঠিত কোনো অপরাধের দণ্ড পরবর্তী সময় প্রণীত আইনে অতিরিক্ত দণ্ডের বিধান না করতে পারেন। নতুন আইনে শাস্তির বিধান কমানো হলে তা ভুক্তভোগী অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে যাবে। এটা সংবিধানের সহজাত উদ্দেশ্যকে সমর্থন করে।’

সচিবালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর থেকেই সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে প্রতিনিয়ত এ আইনের অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে সরকার। এখন আইনটি বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়নের সময়ও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি জটিল বিষয় এত দ্রুত সংশোধন বা বাতিল করে নতুন আইন করাটা দুরূহ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আগামী ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে আইনের খসড়াটি বিল আকারে তোলার উদ্দেশ্যে দ্রুতই মন্ত্রিসভায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.