টিকটক, ফেসবুকের সময়েও পাঠ উদ্যোগী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

0
117
‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ উদ্যোগ পুরস্কার বিতরণ’ অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথিরা। ঢাকা, ২৩ জুন

পরীক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীতে রূপান্তর করা কঠিন। বিভিন্ন পাঠাগারের চেয়ার দখল করে রাখেন চাকরির জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পাঠতালিকায় সৃজনশীল বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। আজকের সৃজনশীল বই পড়া শিক্ষার্থী বাংলাদেশের জন্য এক সম্ভাবনা। তাই পাঠাগার এবং পাঠে তরুণদের উৎসাহী করতে চেয়েছিলেন প্রয়াত নাট্যজন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের।

‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ উদ্যোগ পুরস্কার বিতরণ’ অনুষ্ঠানে এমন সব মন্তব্য উঠে এল আলোচকদের কথায়। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত হয় এ অনুষ্ঠান। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী পাঠাগারের সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছেন প্রতিযোগিতায়।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক তরুণসমাজ তৈরির প্রয়াস ছিল আলী যাকেরের। তাই এমন আয়োজন শুধু তাঁকে স্মরণ করা নয়, জ্ঞানচর্চায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করার পদক্ষেপ। আলী যাকের নিজের জীবন উদ্‌যাপন করেছিলেন উল্লেখ করে সারওয়ার আলী উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান পাঠ আনন্দের মধ্য দিয়ে জীবন উদ্‌যাপনের।

বাঙালি নানাভাবে নিজের বিকাশের পথ খুঁজে নেয় উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, অনেক মানুষ অনেকভাবে যুক্ত হয়েছেন এ উদ্যোগে। এই শক্তি কী করতে পারে, তার প্রমাণ আজকের এ আয়োজন। সামনে শতাধিক পাঠাগারকে এ আয়োজনে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মফিদুল হক বলেন, এখনকার অনেক শিক্ষার্থী পাঠবিমুখ নয়, পাঠ উদ্যোগী হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সবশেষে সংসদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর । তিনি বলেন, বাংলাদেশে দর্শনমূল্য দিয়ে নাটক দেখার ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছে আলী যাকেরের হাত ধরে। দেশের হৃদয় তৈরির এক কারিগর আলী যাকের তিনটি বিষয়ের সঙ্গে কোনো দিন আপস করেননি। মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ।

দেশের ৫০টি পাঠাগারের মাধ্যমে কয়েক শ শিক্ষার্থীকে বই পড়ানো এবং প্রতিক্রিয়া লেখার কাজের সমন্বয় করেছেন দনিয়া পাঠাগারের মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। তিনি উল্লেখ করেন, করোনাকালে ১০টি পাঠাগারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই পড়ানোর প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের এগিয়ে আসার কথা।

অনুষ্ঠানে প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী। ঢাকা, ২৩ জুন
অনুষ্ঠানে প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী। ঢাকা, ২৩ জুন

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর বলেন, বিভিন্ন পাঠাগারের চেয়ার দখল করে রাখেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে সৃজনশীল বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবে, সে প্রমাণ আজকের অনুষ্ঠানে হলভর্তি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।

শ্রেয়া সর্বজায়া তাঁর বাবা আলী যাকেরের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, বই মানুষকে নতুন জীবন দেয়। ফেসবুক, টিকটকের এ সময়েও এত শিক্ষার্থী যখন বই নিয়ে আগ্রহ দেখায়, তখন আশা জাগায়। বই মানুষের চিন্তাকে কেমন করে জাগ্রত করে, সে আলোচনা উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকেরের কথায়। তিনি জানান, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী নির্বাচনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের কল্পনাশক্তির বিকাশের দিকে।

আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ উদ্যোগ শুরু হয় ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে। স্কুল পর্যায়ে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, কলেজ পর্যায়ে আলী যাকেরের লেখা সেই অরুণোদয় থেকে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের লেখা ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ বইগুলো পড়তে দেওয়া হয়।

এরপর শিক্ষার্থীরা পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে জমা দিলে সেখান থেকে কয়েক ধাপে বাছাই করে জুরি বোর্ড। মোট ৩০ জনকে নির্বাচিত করা হয় যাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকার বই, ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। সনদ তুলে দেওয়া হয় অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীর হাতে। ‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ উদ্যোগ’-এর সহায়তা করছে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন। পরবর্তীকালে এ পাঠ কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে বলে জানান আয়োজকেরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.