জোড়াতালি দিয়ে চলছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব

0
85

শিক্ষকেরা এক দিনে যে টাকা পান, তা যাতায়াতসহ নানা খাতে খরচ হয়ে যায়। এ জন্য শিক্ষকেরা ক্লাবে যেতে আগ্রহ পান না। 

যশোরের অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত কিশোর-কিশোরী ক্লাবগুলো জোড়াতালি দিয়ে চলছে। ক্লাসের শিক্ষকেরা অনিয়মিত। প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জন সদস্য থাকলেও কিশোর-কিশোরীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। তাদের দেওয়া নাশতা অস্বাস্থ্যকর। কিশোরীদের দেওয়া হয় না স্যানিটারি টাওয়েল। ক্লাবে তবলা থাকলেও তবলচি নেই। সমন্বয়কারী হিসেবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নারী সদস্যরা নিযুক্ত থাকলেও সম্মানী বন্ধ হওয়ায় তাঁরা আসেন না। দুই উপজেলার আটটি কিশোর-কিশোরী ক্লাব ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ক্লাব-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আবৃত্তি ও গানের শিক্ষকেরা এক দিনে যে টাকা পান, তা যাতায়াত, ইন্টারনেট ডেটা প্যাক ক্রয়, নাশতার জন্য উপজেলা কার্যালয় যেতে খরচ হয়ে যায়। শিক্ষকেরা যে সম্মানী পান, তার বড় অংশ এভাবে খরচ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষকেরা আগ্রহবোধ করেন না।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন’ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুসারে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত গান, আবৃত্তি, কারাতের মতো সৃজনশীল এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সমাজের বিভিন্ন স্তরের কিশোর-কিশোরীদের সম্পৃক্ত করাসহ নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও মাদক প্রতিরোধ এবং প্রজননস্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রতিটি ক্লাবে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ২০ কিশোরী ও ১০ কিশোর, মোট ৩০ জনকে সদস্য করা হয়।

ডিপিপি অনুসারে, প্রতিটি ক্লাবে একজন গানের শিক্ষক ও আবৃত্তির শিক্ষক থাকবেন। এ ছাড়া প্রতি উপজেলায় দুজন জেন্ডার প্রমোটর, একজন কারাতে প্রশিক্ষক থাকবেন। থাকবেন একজন ফিল্ড সুপারভাইজার।

গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল অভয়নগরের পাঁচটি ও ৫ মে বাঘারপাড়ার তিনটি ক্লাব ঘুরে দেখেন এ প্রতিবেদক। অভয়নগরের বাঘুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে আবৃত্তির ক্লাসে ১২ কিশোর-কিশোরীকে দেখা যায়। নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, উপস্থিত ১০ জনের মধ্যে দুজন গত বছরের শিক্ষার্থী।

বাগদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে আবৃত্তির ক্লাসে ১৬ কিশোর-কিশোরীকে উপস্থিত দেখা যায়। সুন্দলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত ক্লাবে চার মাসে কারাতে প্রশিক্ষক এক দিন এসেছেন।

অভয়নগরের ফিল্ড সুপারভাইজার মিতা মণ্ডল বলেন, ‘আমার যানবাহন নেই, ফুয়েল নেই। এ জন্য সব সময় ফিল্ড ভিজিটে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে আমি নিয়মিত ই-ভিজিট (ভার্চ্যুয়াল) করে থাকি।’

বাঘারপাড়া উপজেলার চিত্রও একই। ভিটাবল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তিন কিশোর ও ছয় কিশোরীর আবৃত্তির ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক ফারজানা খাতুন। মাহমুদপুর ও ছাতিয়ানতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত কিশোরী-কিশোরীরা জানায়, জেন্ডার প্রমোটর স্যার নিয়মিত আসেন না। কারাতে প্রশিক্ষক ও সুপারভাইজারকে তাঁরা কোনো দিন ক্লাবে দেখেনি।

উপজেলার কারাতে প্রশিক্ষক আলী ইমাম বলেন, ‘গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর আর বেতন পাইনি। এরপরও চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত আমি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন আর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি না।’ জেন্ডার প্রমোটর প্রীতিশ রায় বলেন, ‘আমি নিয়মিত ক্লাস নিই।’

বাঘারপাড়ার ফিল্ড সুপারভাইজার ছন্দা দত্ত বলেন, ‘আমার ১০১টি ক্লাব দেখতে হয়। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না।’

অভয়নগর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা রাজকুমার পালের সঙ্গে কথা বলার জন্য কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.