জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতে শিক্ষার্থীদের জঙ্গলে নিয়ে ‘র‌্যাগিং’

0
100
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের জঙ্গলে ডেকে নিয়ে আগের ব্যাচ র‌্যাগ (মানসিক নির্যাতন) দিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ডের পেছনের জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (৫০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। পরে র‍্যাগিং চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের একাধিক সদস্য।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ড–সংলগ্ন এলাকায় জরুরিভাবে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকতে বলেন একই বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

রাত সাড়ে ৮টায় উপস্থিত হতে বলা হলেও ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আসেন রাত সাড়ে ১১টায়। সেখানে এসেই আগে থেকে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন তাঁরা। ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মুরগির আদলে চেয়ারে বসানো হয়। র‍্যাগিংয়ের একপর্যায়ে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের দিকে জুতা ছুড়ে মারেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক। তবে তাঁদের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় আবদুল্লাহ আল কাফি নামের এক শিক্ষার্থীকে ধরে ফেলেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত অন্য শিক্ষার্থীদের কথা জানান তিনি।

আবদুল্লাহ আল কাফি বলেন, ‘আজ আমাদের ডিপার্টমেন্টের জুনিয়রদের ডাকা হয়েছিল। আমরা ৫০তম ব্যাচের ১০ থেকে ১২ জন ছিলাম। এর মধ্যে ছিল নূর ইসলাম, তানভীর ইসলাম, মো. আবদুস ছবুর, প্রিন্স কুমার রায়, আহমেদ ইজাজুল হাসান আরিফ, চিরঞ্জীত মণ্ডল, মো. রাসেল হোসাইন, মো. সিজান, খন্দকার মোয়াজ ইসলাম, মিঠুন রায়। এ সময় ওদের (জুনিয়রদের) র‍্যাগ দেওয়া হয়, তবে আমি দিইনি। আমি কীভাবে যেন আজ এসে পড়েছি। আমি ভুল স্বীকার করছি আর এমনটা হবে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী ৫১তম ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, রাত ৮টায় বড় ভাইয়েরা (৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা) সিডনি ফিল্ড–সংলগ্ন জঙ্গলে তাঁদের ডাকেন। কিন্তু বড় ভাইয়েরা আসেন রাত ১১টায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো তাঁদের র‌্যাগ দেওয়া হয়, তাঁদের মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়। ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে বড় ভাইয়েরা তাঁদের মা–বাবা তুলে গালিগালাজ করেন। সিনিয়রদের সালাম না দেওয়ায় শাসন এবং তাঁদের একজনের গায়ে জুতা ছুড়ে মারেন। লাফাতে বলে কয়েকজনকে ‘মুরগি’ বানিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে সিডনি ফিল্ড–সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অতিথি কক্ষে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রদের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ভুক্তভোগী ১২ জন শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘রাতে জানতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনি ফিল্ড–সংলগ্ন জঙ্গলে নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং করা হচ্ছে। এমন খবরের ভিত্তিতে প্রক্টর স্যারের নির্দেশে আমরা দুজন (তিনি ও সহকারী প্রক্টর রনি হোসেন) ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে যাওয়ামাত্রই কয়েকজন সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে আমরা আবদুল্লাহ আল কাফী নামের একজনকে ধরতে পারি। কারা সেখানে উপস্থিত ছিল, সে তাদের নাম জানিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের অভিযোগও পেয়েছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.