জামায়াত ‘পিছু হটল’ যে কারণে

0
97
অ্যাকশনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি পুলিশের

অনুমতি না পেলেও রোববার পর্যন্ত ৫ জুনের পূর্বঘোষিত সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় ছিল জামায়াতে ইসলামী। অনুমতি ছাড়া সমবেত হওয়ার চেষ্টা করলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি ছিল পুলিশের। এ অবস্থায় সমাবেশের দিন এসে কর্মসূচি স্থগিত করেছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে– জামায়াত কি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেছে? নাকি সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে হুংকার দিয়েও ইউটার্ন নিতে বাধ্য হয় তারা?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, নেতাকর্মীর মুক্তি, পণ্যমূল্য কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা সোমবার বিকেলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কর্মদিবসে এ ধরনের সমাবেশ করলে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কথা বলে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। সোমবারের কর্মসূচি স্থগিত করলেও আগামী শনিবার সমাবেশের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে জামায়াত। এখন দেখার বিষয়, পুলিশ শনিবার ছুটির দিনে তাদের অনুমতি দেয় কিনা।

এরই মধ্যে আদালতের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন হারিয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। ফলে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোটে লড়ার সুযোগ নেই তাদের। নিবন্ধন ছাড়া অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা সভা-সমাবেশ করছে। এটিকে উদাহরণ হিসেবে সামনে এনে জামায়াতও সভা-সমাবেশের অধিকার দাবি করছে। বাস্তবতা হলো, অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জামায়াতের তুলনা চলে না। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দলগতভাবে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তারা। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে এরই মধ্যে দলের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, এম কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। দলের বাগ্মী নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে। এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। সাবেক আমির গোলাম আযম আমৃত্যু কারাদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান। আবদুস সোবহানও কারাগারে মারা গেছেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় সারির অনেক জামায়াত নেতার বিচার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের রোববার রাতে বলেছেন, ‘সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া অসাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারবিরোধী।’ দল হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হতে পারে। আইনমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বেশ কয়েকবার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। সে ক্ষেত্রে অন্য নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিক অধিকারের তুলনা চলে না। ’৭১ সালের কৃতকর্মের জন্য এখনও দলগতভাবে জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি তারা। অন্যদিকে আবার নিজেদের ঘরে ভাঙন শুরু হয়েছে। জামায়াতের একাংশ এবি পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের জোট ছিল জামায়াতের। এখন সেই জোট রয়েছে কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ জামায়াতের শীর্ষ পর্যায় থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা আর জোটে নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব বারবার এড়িয়ে গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্বের নানা কারণ রয়েছে। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির পর বিএনপির ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় জামায়াত। আবার গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপির একটি অংশ মনে করে জামায়াত জোটে থাকায় আন্তর্জাতিকভাবে কোনো কোনো দেশ বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে না। এককথায় নানামুখী চাপে জামায়াতের অবস্থান সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়েছে। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম দল হলেও তাদের সাংগঠনিক কাঠামো জাতীয় পার্টির চেয়ে শক্তিশালী ছিল। অর্থনৈতিক খাতে ব্যাংক-বীমা তৈরি করার পাশাপাশি চিকিৎসা খাতেও নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছিল তারা। এমনকি সংবাদমাধ্যমেও নজর দিয়েছিল।

বলা হয়ে থাকে, ২০১৪ সালে বিএনপি যে লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়েছিল, তা বাস্তবায়নে নেপথ্য শক্তি ছিল জামায়াত-শিবির। সাতক্ষীরা ও বগুড়ার সহিংসতার কথা মানুষ ভুলে যায়নি। বর্তমান বাস্তবতায় বলা যায়, সেই সাংগঠনিক অবস্থান ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়েছে।

জামায়াত নেতা ডা. তাহের দাবি করেছেন, তাঁদের কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া না হলে তা মার্কিন ভিসা নীতি অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগে বাধা হিসেবে গণ্য হবে। একটি মৌলবাদী দলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে মূল্যায়ন করবে তা সে দেশের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচবার ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করে জামায়াত। আগের চারবার অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশ করেনি। জমায়েত ঠেকাতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মাঠে নামলেও জামায়াত ঘোষিত সমাবেশস্থলে যায়নি। এখন আগামী শনিবার বেলা ২টায় জামায়াত বায়তুল মোকাররমের সামনে সমাবেশের অনুমতি পাবে কিনা বা না পেলে তারা সংঘাতে জড়াবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।

মিজান শাজাহান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.