জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে আবাসিক সমন্বয়কারীকে তলবের প্রসঙ্গ

0
103
জাতিসংঘ

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আশরাফুল হোসেনের (হিরো আলম) ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর টুইটের পর তাঁকে ডেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অসন্তোষ প্রকাশের বিষয়টি জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। একজন সাংবাদিক জানতে চান, কোনো ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করার প্রতিক্রিয়ায় অসন্তোষ জানাতে কোনো সদস্যরাষ্ট্র জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীকে তলব করতে পারে কি না, বিষয়টি সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব অবগত কি না।

জবাবে স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘দেখুন, এখানে কয়েকটি বিষয় আছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের যে দলটি কর্মরত রয়েছে, তাদের ওপর মহাসচিবের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এ ছাড়া সদস্যদেশের সরকার পক্ষ থেকে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীকে তলব করাটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। সমন্বয়কারীর বলা কোনো কথার সঙ্গে সে দেশের দ্বিমত থাকলে তলব করতেই পারে। এটাই যথাযথ প্রক্রিয়া। যখন কোনো বিষয় নিয়ে অসন্তোষ থাকে, তখন সদস্যদেশগুলো এ প্রক্রিয়া মেনে চলে। তবে বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের দলের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’

স্টিফেন দুজারিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। অন্তত দুজনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন কয়েক শ মানুষ। বিক্ষোভকারীরা আগামী জানুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চান। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আপনি কি মনে করেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ রয়েছে?’

জবাবে স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘আমি মনে করি, মানুষের কথা বলার, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। আর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, মানুষের এসব অধিকার রক্ষায় সহায়তা করা। সবখানেই এমনটা চলে। আমাদের এ প্রশ্ন বহুবার করা হয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে আমি আর এমন কোনো পূর্বাভাস দিতে চাচ্ছি না।’

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেন। ওই টুইটে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের যে মৌলিক মানবাধিকার, তা নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করতে হবে।’

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারী শেলডন ইয়েটকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সরকার। এ সময় অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘ যেন প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে, সরকারের এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।

গোয়েন লুইস এ মুহূর্তে বাংলাদেশে না থাকায় ইউনিসেফের এ দেশীয় প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের তলবের বিষয়টি কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ আগেও নানা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের তলব করেছে। তবে নিকট অতীতে জাতিসংঘের কোনো প্রতিনিধিকে তলব করে অসন্তোষ প্রকাশের নজির নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.